ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিশেষ মহল

এবার জাপানীকে খুন ॥ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ অক্টোবর ২০১৫

এবার জাপানীকে খুন ॥ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্ত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক হত্যার এক সপ্তাহের মধ্যে রংপুরে একই কায়দায় সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করল জাপানী নাগরিক হোসে কোনিওকে (৪৮)। ঢাকায় জাপানী দূতাবাসের একটি দল সার্বিক পরিস্থিতি জানতে ঢাকা থেকে রংপুর রওনা হয়েছে। সন্দেহভাজন ৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহত জাপানী বাংলাদেশে ব্যবসা করছিলেন। গ্রামের পথে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলযোগে তিন সন্ত্রাসী জাপানীকে তিনটি গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঠিক একই কায়দায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশান কূটনীতিকপাড়ায় হেঁটে যাওয়ার সময় ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলাকেও (৫০) তিনটি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। দুটি হত্যার ধরন একই। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়াচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে নাশকতার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর বাতিল এবং পর পর দুই বিদেশীকে একই কায়দায় গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ সদর দফতরের সামনে গোলাগুলিতে দু’জন নিহত এবং আমেরিকায় গুলিতে মানুষ হত্যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলতেই এমন ঘটনা ঘটানো হতে পারে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই পর পর দুই বিদেশী হত্যার ঘটনা ঘটানো হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার কচুআলুটারি এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন জাপানী নাগরিক হোসে কোনিও। আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, অন্যান্য দিনের মতোই জাপানী ভদ্রলোক মুন্সিপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়ে রিক্সায় আলুটারি এলাকায় যান। মূল সড়ক থেকে ২০ থেকে ২৫ গজ কাঁচা সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একটি মোটরসাইকেলযোগে তিনজন আগ থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল। একজন মোটরসাইকেলেই বসে থাকে। অপর দু’জনের একজন কোনিওকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি চালিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রমজান আলী নামের এক ব্যবসায়ী তাকে অটোরিক্সাযোগে মূল রাস্তায় নিয়ে যান। সেখান থেকে একটি পিকআপভ্যানে কোনিওকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সারওয়ার আলম জানান, নিহতের বুকে, ঘাড়ে ও হাতে তিনটি গুলি লেগেছে। পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসাসহ আলামত সংগ্রহ করেছে। যে বাড়ির সামনে ঘটনাটি ঘটেছে সেই মালিকের ছেলে মুরাদ, রিক্সাচালক মুন্নাফ, মুন্সিপাড়ার যে বাড়িতে ওই জাপানী থাকতেন সেই বাসার মালিক জাকারিয়া বালা ও ব্যবসায়িক পার্টনার হীরাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়ার ব্যবসায়ী জাকারিয়া বালা এক সময় জাপানে থাকতেন। বর্তমানেও তার অপর তিন ভাই জাপানে রয়েছেন। জাপানে বসবাসের সুবাদেই সেখানে নিহত হোসে কোনিওর সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। সেই সুবাদেই হোসে কোনিও রংপুরে আসেন। তিনি জাকারিয়া বালার দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষে থাকতেন। সেখানে থেকে রংপুর মহানগর সংলগ্ন কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামের শাহ আলমের কাছ থেকে ২ একর জমি লিজ নিয়ে ‘কোয়েল’ নামীয় এক জাতের ঘাস আবাদ করে বিক্রি করার পাশাপাশি ওই ঘাস নিয়ে গবেষণা চালাতেন। ঘাসটি গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিদেশী নাগরিক খুনের বিষয়ে জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাখাওয়াত রাঙ্গা বলেন, বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতেই একটি মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির ও রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক। পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক জানান, জাপানী নাগরিক হোসে কোনিও হত্যার ঘটনায় তদন্ত চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই হত্যার মোটিভ উদ্ধার সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। কোনিওর লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের তরফ থেকে কূটনৈতিকভাবে জাপানকে অবহিত করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিও কোঅপারেশন বাংলাদেশের প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সিজার তাভেলা। এনজিওটি ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে পানি, স্যানিটেশন, রিফিউজি সমস্যা ও পুনর্বাসনসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে। চলতি বছরের ১৫ মে সিজার বাংলাদেশে যোগদান করেন। ইতোপূর্বে অন্তত ১০ দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ করেছেন তিনি। তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, নাশকতার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল ঘোষণার দিনই ঘটনাটি ঘটে। সরকারকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতে তৃতীয় কোন পক্ষ অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করতেই এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। এরসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুর যোগসূত্র থাকা বিচিত্র নয়। হত্যাকারী হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৩ জনের উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, একটি মোটরসাইকেলে তিন হত্যাকারী ৮৩ নম্বর সড়কে অবস্থান নেয়। দু’জন সিজারকে মেহগিনি গাছের নিচে ঘন অন্ধকারে খুব কাছ থেকে পাঁজরে গুলি করে। হত্যাকা-ের ধরন বলছে, পেশাদার খুনীরা সিজারকে হত্যা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের তিনটি বুলেটের খোসা উদ্ধার হয়েছে। খোসাগুলোর প্রাথমিক পরীক্ষায় অস্ত্র ও বুলেটগুলো খুবই আধুনিক প্রযুক্তির বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উদ্ধারকৃত বুলেটের সঙ্গে ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধার বুলেটের মিল রয়েছে। হত্যাকা-ে সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ জনের উপস্থিতি ছিল। শনিবার পর্যন্ত সিজারের লাশ হস্তান্তর হয়নি। লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি ঢাকায় ইতালীয় দূতাবাসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ইতালির মিলান শহরে বসবাসরত ১৬ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ের কাছেই সিজারের লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর একই কায়দায় রংপুরে জাপানী নাগরিক হত্যার মধ্যে বিশেষ কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য ডিবির একটি দলকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় পর পর দুই বিদেশী খুনের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকা-ের ধরন একই। ইতোপূর্বে যারা অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে তারাই মূলত এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। রংপুরে জাপানী হত্যায় কয়েকজনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুই বিদেশী হত্যাকা-ের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুর যোগসূত্র রয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। দুটি হত্যাকা-ের তদন্তে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তদন্তকারীরা বলছেন, দুই বিদেশী ও ব্লগার হত্যাকা-ের ধরন একই রকমের। শুধু হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্রের পার্থক্য রয়েছে। ব্লগার হত্যায় ধারালো চাপাতি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে খিলগাঁওয়ে নিলয় হত্যায় আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। যদিও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। দুটি হত্যাকা-ই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশকে দেশী ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে রাখতেই পর পর দুই বিদেশীকে হত্যা করা হতে পারে। হত্যার ধরন তেমন ধারণারই জন্ম দিয়েছে। এরসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুর যোগসূত্র থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সব দিক মাথায় রেখেই র‌্যাব ঘটনা দুটি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে পর্যালোচনা এবং খুনীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশীদের হত্যা দ্রুত সংঘটিত করতে চাপাতি বা অন্য কোন ধারালো অস্ত্রের পরিবর্তে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে বলে সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে। সিজার হত্যার পর বিভিন্ন দেশের তরফ থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের চলাফেরার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করে। এমন সতকর্তার মধ্যেই রংপুরে খুন হলো জাপানী নাগরিক। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিল এবং বিদেশী হত্যার পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশের সদও দফতরের বাইরে গোলাগুলির ঘটনায় এক পুলিশ ও বন্দুকধারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র রয়েছে বলে দেশটির পুলিশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। অস্ট্রেলীয় পুলিশ শনিবার দাবি করেছে, ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর শুক্রবার যে হামলা চালিয়েছে তার সঙ্গে ‘সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক’ রয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র অস্ট্রেলিয়া ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে যুক্ত। পুলিশ দাবি করেছে, নিহত হামলাকারী কিশোর ইরাকি-কুর্দি বংশোদ্ভূত। তার জন্ম ইরানে। নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার এন্ডু শিপিওনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারীর কর্মকা- ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিডনির একটি ক্যাফেতে প্রায় ১৭ ঘণ্টার জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটে পুলিশের রক্তাক্ত অভিযানের মধ্য দিয়ে। জঙ্গী হামলার হুমকির কথা বলে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড তাদের দলের নির্ধারিত ঢাকা সফর স্থগিত করার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই খোদ সিডনিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে দোষারোপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার ৭০ নাগরিক মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গী-বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আর ওইসব উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা বা সমর্থন দিচ্ছেন প্রায় এক শ’ নাগরিক। এদিকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিলের পেছনে দেশের কয়েকজনের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে শুক্রবার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এদিকে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগনে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে ১৫ বারের মতো গুলির ঘটনা ঘটল। সার্বিক বিষয় সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মতো দেশে গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনার মধ্যেই বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশকে দেশী এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতেই বিদেশী হত্যার ঘটনা ঘটানো হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এরসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুর যোগসূত্র রয়েছে। ইতোমধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অংশ হিসেবেই বিদেশীদের টার্গেট করা হতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যা করা হতে পারে দুই বিদেশীকে। বিষয়টি সম্পর্কে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক নুুরুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। দেশে এমন কোন খারাপ পরিস্থিতিও নেই। এমন একটি সময়ে নাশকতার আশঙ্কা করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল করা এবং পর পর দুই বিদেশী হত্যা বিশেষ ইঙ্গিত বহন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমান সময়ের চেয়ে খানিকটা দুর্বল পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছে। কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- হয়নি। যদিও ওই সময়ও নাশকতার আশঙ্কার ধোঁয়া তোলা হয়েছিল কোন কোন দেশের পক্ষ থেকে। যদিও সে সব অনুমান মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কি কারণে এ ধরনের হত্যাকা- হয়েছে তা নিশ্চিত হতে আরও সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ক্ষমতাসীন সরকারকে খানিকটা বেকায়দায় রাখতে ষড়যন্ত্র হিসেবে বিদেশী হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত জটিল সমস্যার সমাধান হওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকার সার্বিকভাবেই সফল অবস্থানে। এমন একটি সময়ে নাশকতার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল এবং পর পর দুই বিদেশীকে একই কায়দায় হত্যার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগের। দুই বিদেশীকে হত্যার ঘটনা যদি ব্যক্তিগত বা আর্থিক কারণে ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়। কিন্তু হত্যাকা-ের ধরন বিশেষ ইঙ্গিত বহন করছে। বিশেষ করে জাপানী নাগরিক হত্যার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। কারণ বাংলাদেশের ভাল বন্ধু দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, রাজশাহী সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি দল শনিবার রাত থেকে জাপানী নাগরিক হত্যার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে। জাপানী দূতাবাসের সতর্কতা ॥ রংপুরে জাপানের নাগরিক হোসে কোনিও হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশে অবস্থান করা নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে দেশটি। শনিবার ঢাকার জাপান দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এ সতর্কতা নির্দেশ জারি করা হয়। ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, জাপানী নাগরিকরা অপহরণ, সন্ত্রাসবাদ এবং হুমকির মতো আসন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এ জন্য নিজ দেশের নাগরিকদের একসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে ঢাকার জাপান দূতাবাস। এছাড়া অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য গাড়িতে ভ্রমণের সময় দরজা বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খোলা যানবাহনে (যেমন-রিকশা, মোটরসাইকেল, হাঁটা কিংবা বাইসাইকেল) চলাচল না করতে পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। হত্যার দায় স্বীকার আইএসের ॥ বিডিনিউজ জানায়, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) রংপুরে জাপানী নাগরিক হোসে কোনিওকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি গ্রামে মুখোশধারীদের গুলিতে নিহত হন কোনিও, যিনি ওই এলাকায় একটি জমি ইজারা নিয়ে ঘাসের খামার করছিলেন। আইএসের এক টুইটে ওই হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করা হয়েছে বলে রাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এর আগে গত সোমবার ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা খুন হওয়ার পরও আইএস ওই হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বলে জঙ্গী হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’ জানায়। তবে ওই হত্যাকা-ে আইএসের সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ ‘পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে তাদের দাবি নাকচ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
×