ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শরণার্থী সমস্যায় জরুরী সাড়া দিতে ইইউকে জাতিসংঘের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শরণার্থী সমস্যায় জরুরী সাড়া দিতে ইইউকে জাতিসংঘের আহ্বান

নাজনীন আখতার ॥ অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যা সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জরুরী ভিত্তিতে সাড়া দিতে আবারও জোর দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। হাঙ্গেরির সীমান্তে শরণার্থী প্রবেশে বাধা দেয়ার কঠোর সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। ‘আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত অতিক্রম কোন অপরাধ নয়’ উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর বলেছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকায় যে মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা ইউরোপের একক কোন দেশ সমাধান করতে পারবে না। এ সমস্যা সমাধানে একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নই জরুরী ভিত্তিতে সাড়া দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারবে। ইউরোপের দেশ বিশেষ করে হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়ার সীমান্তে সমবেত হওয়া শরণার্থী ও অভিবাসনে ইচ্ছুকদের গত কয়েকদিন ধরে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং অন্য দেশের সীমান্তের দিকে ঠেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে চলতি সপ্তাহে আবারও এ আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর। সীমান্তে জড়ো হওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে ইউরোপকে আরও বেশি সংহতি ও আস্থা প্রকাশ করতে বলেছে ইউএনএইচসিআর। গত বুধবার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শরণার্থী ও অভিবাসনে ইচ্ছুকদের দুর্ভোগও। বিশেষ করে হাঙ্গেরি যেভাবে তাদের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে তাতে ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরণার্থী ও আশ্রয় নিতে আগ্রহীদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও ইউরোপের এ সংক্রান্ত আইনের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে সংস্থার হাইকমিশনার এন্টোনিও গুটারেসের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, ইউএনএইচসিআর হাঙ্গেরির কাছে আবারও আহ্বান জানাচ্ছে, যেন তারা শরণার্থীদের আইনী সুরক্ষা ও নৈতিক অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বিঘœ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। দেশটির উচিত এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন মেনে চলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। প্রতিবেদনে বলা হয়, লক্ষ্য করা যাচ্ছে হাঙ্গেরি অল্প কয়েকজন শরণার্থীকে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। এর ওপর শিশু সন্তান ও পরিবারসহ অবস্থান নেয়া সিরীয় শরণার্থীদের ওপর পানি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এমনকি হাঙ্গেরি ইউএনএইচসিআরের পরামর্শ ও অনুরোধ উপেক্ষা করে শরণার্থীদের সার্বিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের অধীনে ধারা ৩১ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থী ও উদ্বাস্তুদের জন্য অননুমোদিত উপস্থিতি অদ-নীয়। তাই তাদের এভাবে সীমান্তে বাধা দেয়া অনুচিত। এ প্রসঙ্গে সংস্থার হাইকমিশনার এন্টোনিও গুটারেসের বক্তব্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। গুটারেস বলেছেন, আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্ত অতিক্রম কোন অপরাধ নয়। হাঙ্গেরির সীমান্তে উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে ইউএনএইচসিআরের নতুন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবেশ করতে থাকা উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের পর্যবেক্ষণ ও নিবন্ধনের জন্য সহায়তার লক্ষ্যে গ্রীসে সুবিধাজনক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘোষণা অনুযায়ী, ৪০ হাজার শরনার্থীকে গ্রহন করার জন্য প্রথম প্রবেশস্থল গ্রীস ও ইতালিতে প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে সার্বিয়ার জন্য একটি নতুন জরুরী প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে যা ইউরোপের অন্যান্য দেশে শরাণার্র্থীৎদের নিবন্ধন ও সহায়তার জন্য কাজ করবে। পাশাপাশি ইউএনএইচসিআর প্রতিবেশী দেশগুলোতে সিরীয় শরণার্থীদের অবস্থান নিয়ে ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশ, পুনর্বাসন, পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন এবং শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে সহায়তা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তের দিকে শরণার্থীদের ভিড় বাড়ছে। ইউএনএইচসিআর সেক্ষেত্রে ক্রোয়েশিয়ার সরকারকে রিলিফ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া গ্রীস ও সার্বিয়াতেও আর বেশি পরিমান রিলিফ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতিদিন শুধু গ্রীসেই ৪ হাজারেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশের জন্য সমবেত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা থেকে পালানো এবং উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ অভিমুখে বিপজ্জনক যাত্রায় একের পর এক ঘটে চলেছে হৃদয়বিদারক মৃত্যুর ঘটনা। যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং উন্নত জীবন যাপনের প্রত্যাশায় দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে ইউরোপে বিপজ্জনক যাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে ভূমধ্যসাগর হয়ে উঠছে মৃত্যুকূপ। ইউরোপের তুলনামূলক কম ধনী দেশ ইতালি, গ্রীস ও মাল্টায় প্রবেশ করতে গিয়ে শরণার্থী ও অভিবাসী মৃত্যুর ঘটনার ৭৫ শতাংশই ঘটছে ভূমধ্যসাগরে। এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নৌকায় করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো মানুষদের অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা অভিবাসী নাকি শরণার্থী তা সুস্পষ্ট করতে বলেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
×