ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ আগস্ট ২০১৫

পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের নদীভাঙ্গন আপাতত নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়নি। ভাঙন এলাকা বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে আটকানো হয়েছে। নতুন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে অতিরিক্ত নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে আগামী ১৫ দিন যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে চীনের মেজর ব্রিজ কোম্পানি। কোম্পানির জিএম বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থা করছেন এ ভাঙ্গনের কারণে। এদিকে পদ্মার পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাঁচটি জেটি রয়েছে। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি জেটি। ভেসে থাকা জেটির কোন ক্ষতি হয়নি। হয়েছে- জেটির সংযোগ সড়ক ও ক্রেনের রেললাইন এবং অস্থাযী কংক্রিট প্ল্যান্ট। ভাঙ্গনের ঝুঁকি বন্ধ হলে এগুলো আবার সেট করা হবে। বুধবার সকালে প্রায় ২০ মিটার দীর্ঘ এবং ৪ মিটার প্রস্ত এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর আগে রবিবার রাতে আকস্মিক ভাঙ্গনে বিলীন হয় এই ইয়ার্ডের প্রায় দু’ শ’ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৫০ মিটার প্রস্ত এলাকা। মূল সেতু এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাটিতে লৌহজংয়ের কুমারভোগে পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের এই ভাঙ্গন প্রথম দেখা দেয় গত ২৭ জুন। সে সময় এক শ’ মিটার দীর্ঘ ও ৫০ মিটার প্রস্ত এলাকা বিলীন হয়। এবার সে একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয় প্রায় দু’ মাস পর। তবে এবারের ভাঙ্গন আগের চেয়ে বেশি ভয়াবহ। পদ্মা সেতুর একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ভাঙ্গন নিয়ে এখন কোনভাবেই সেতু কর্তৃপক্ষ চিন্তিত নয়। উত্তাল পদ্মায় ভাঙ্গন হতে পারে এমন প্রস্তুতি নিয়েই সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। মূল সেতুর কাজ যথাযথভাবেই চলছে। মাওয়ার কাছে ৭নং পিলারে তিন হাজার টন ওজন চাপ দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন জার্মান হ্যামার দিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে কনস্ট্রাক্টশন ট্রায়াল পাইল। এছাড়া টেস্টিং পাইলেও কাজ চলছে। মাওয়া নৌফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইউনুস আলী জানান, বাঁশ ও খুঁটির বেড়া দিয়ে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পর ভাঙন বন্ধ হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতামূলকভাবে আরও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এদিকে লৌহজংয়ের পুরনো মাওয়া ফেরিঘাট এলাকা ও কুমারভোগের পাশের খড়িয়া এলাকায়ও পদ্মার ভাঙ্গন চলছে। মাওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ সেমি পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার এক সেমি ওপর দিয়ে বইছে। মাওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পদ্মার পানির লেভেল ৬ দশমিক ১১ মিটার রেকর্ড করা হয়। সকালে ছিল ৬ দশমিক ৮ মিটার। এখানে বিপদসীমা ৬ দশমিক ১০ মিটার। এদিকে ভাগ্যকূলে পদ্মার পানির লেভেল এখন বিপদসীমার ২০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাগ্যকূলে পদ্মার পানি ৬ দশমিক ৫০ মিটার রেকর্ড করা হয়। এতে এই অববাহিকার নিম্নœাঞ্চল প্লাবিত ছাড়াও পদ্মা সেতুর নদী শাসনের মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের কিছু অংশ জলমগ্ন হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম শিমুলিয়ার সামান্য পূর্বে খড়িয়ার কাছে পদ্মায় নোঙ্গর করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জাহাজ ও পন্টুন নোঙ্গর করায় স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে খড়িয়া জনপদে আঘাত করছে। এতে নদী ভাঙ্গন বেশি হচ্ছে বলে জানান খাড়িয়ার বাসিন্দারা। তারা খড়িয়ার এলাকা রক্ষায় জাহাজগুলো অন্যত্র নিরাপদে নোঙ্গরের দাবি জানান। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্বে সঙ্গে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে। ভাঙ্গন এখন নিয়ন্ত্রণে। এই ভাঙ্গনে মূল সেতুর কাজে কোন সমস্যা হবে না। পরিকল্পিতভাবেই চলছে সেতুর কাজ।
×