বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রাণহারানো ২৭ পরিবারের স্বজনদের খুশির ঈদ কেটেছে চোখের জলে। স্বজনহারানো পরিবারগুলো গত ১১ দিনেও প্রিয়জন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ঈদের খুশির দিনেও এসব পরিবারের সদস্যরা কেঁদেছে হাউমাউ করে, ডুকুরে। এখনও স্বজন আর গণমাধ্যম কর্মীদের দেখলে আঁচলে চোখের জল মোছেন অনেকে। গত ১০ জুলাই ভোরে শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের বিহারী ব্যবসায়ী শামীম হোসেনের বাসা থেকে যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছে ২০ জন। আহত হয় অর্ধশত। সেই থেকে স্বজনহারানো পরিবারে চলছে শোকের মাতম। থানারঘাট বস্তিতে এবারের ঈদের আনন্দ ছিল ফ্যাকাশে। ছিল না উৎসবের কোন আমেজ। শহরের থানারঘাট বাস্তহারা বস্তির পাশে বেড়িবাঁধের নিচে একচালা টিনের ছাপড়াঘরে বাস ডেইজি আক্তার মিতুর। চার ভাইবোনের মধ্যে মিতু সবার ছোট। বাবা থেকেও নেই! আলাদা সংসার পেতে থাকেন চট্টগ্রামে। চার ভাইবোনের অভাবী সংসারে মা ছিলেন ভরসার মানুষ। যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে সেই ভরসার মানুষ, মাকে হারিয়ে নির্বাক মিতু। অনেকের সঙ্গে সেদিন পদদলিত হয়ে প্রাণ গেছে মিতুর মা খোদেজা বেগমের। এর পর থেকে মিতু ভাসছে চোখের জলে। ঈদের খুশির দিনে মায়ের ব্যবহৃত শাড়ি কাপড় আর ব্লাউজ-পেটিকোট জড়িয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে। স্বজনদের সব সান্ত¡না ছিল অর্থহীন। ‘সব শ্যাষ হয়ে গেছে’ বলে কেঁদেছে মিতু ডুকুরে। তার এই বুকফাটা কান্না বস্তিবাসীদেরও কাঁদিয়েছে। ঈদের দিন স্বজন আর প্রতিবেশীদের পাঠানো সেমাই আর রান্না করা পোলাও মাংস এখনও পড়ে আছে টিফিন ক্যারিয়ারের বক্সে। বৃষ্টিতে ঘরের ভিটির একপাশ ধসে পড়ছে প্রতিদিন। ঘরের ভেতর বিছানা-আসবাব সবকিছুই ছড়ানোছিটানো। যেন ঝড়ে ল-ভ-। রবিবার দুপুরে চুলায় আগুন দিয়ে মিতু চেষ্টা করছিল কিছু চাল আর পাঙ্গাস মাছ সেদ্ধ করতে। নুন আর লবণ-শুঁটকি দিয়ে ভাত খেলেও দিন মিতুর পরিবারে খরচ ২০০ টাকা। সাহায্যের ২৫ হাজার টাকায় কদিন চলবে-প্রশ্ন রেখে মিতু দাবি করে একটা কর্মসংস্থানের। ১১ দিন হয়ে গেল ধর্মমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক আর পৌর মেয়রের দেয়া ২৫ হাজার টাকার অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। এত বড় ঘটনা অথচ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কোন নেতাকর্মী তাদের কোন খোঁজ নিতে আসেনি বলে অনুযোগ মিতুর। ঈদের দিনেও খোঁজ নেয়নি স্বজনছাড়া কেউ। মিতুর অভিযোগ, যাকাতদাতার অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই একসাথে এত প্রাণ ঝড়ে গেছে। মিতু জানায়, যাকাতদাতার এমন সাহায্যের কোন প্রয়োজন ছিল না, যে সাহায্য কারও মা, কারও বাবা ও কারও স্ত্রী-কন্যার জীবন কেড়ে নেয়। হতভাগ্য মিতুসহ এ রকম ২৭ পরিবারে এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।