ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী হাসপাতালে হেল্প লাইন চালুসহ নতুন কিছু উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৫ জুলাই ২০১৫

সরকারী হাসপাতালে হেল্প লাইন চালুসহ নতুন কিছু উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী হাসপাতালে হেল্প লাইন চালু, রোগীর দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপসহ বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও রোগী সেবার মান বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব উদ্যোগের কথা জানানো হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএমএ নেতাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই মতবিনিময় সভায় বক্তারা স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম চালু, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি, বদলি ও পদায়ন স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, অনিয়ম প্রতিরোধ করা গেলে জনগণের দোড়গোরায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাক্তারদের আলাদা বেতন স্কেল বাস্তবায়নেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক নূর হোসেন তালুকদারসহ উর্ধতন কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইউম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, চিকিৎসক নেতাদের মধ্যে বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ, বিএমএ সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ব্যক্তিগত চাপ কমাতে তদবির ও পদায়নের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। প্রতি সোমবার এ কমিটি আবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিকে পদোন্নতি ও বদলির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনভাবেই উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের প্রত্যাহার করা হবে না। তিনি জানান, যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম বন্ধ করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে। এতে করে অনিয়ম কমে যাবে। এছাড়া হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ কমানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। গোলাম সারওয়ার বলেন, ঈদের ছুটিতে যাতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কমিশনের লোভে দরকার না হলেও অনেক হাসপাতালে যন্ত্র আমদানি করা হয়েছে। যা ওই হাসপাতালে ব্যবহার করা হয় না। পদোন্নতির ব্যাপারে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেদিকে নিশ্চয়ই নজর দেবে। স্বদেশ রায় বলেন, বেসরকারী হাসপাতালগুলো অনেক বেশি বেতন দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসদের নিয়োগ দেয়। সরকারী চিকিৎসকরা যে বেতন পান তাতে তাদের সংসার চলে না। বাধ্য হয়েই তারা প্রাইভেট প্রেক্টিস করেন। তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা পেতে হলে ডাক্তারদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল করা দরকার। মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, হাসপাতালে দর্শনার্থী টাকা দিয়ে প্রবেশ করানো হলে সমস্যা দূর হবে না। রোগী প্রতি তিনজন দর্শনার্থীর পাস দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া হাসপাতালে হেল্প লাইন চালুরও আহ্বান জানান বুলবুল। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নঈম নিজাম। লাইসেন্স ছাড়া গজিয়ে ওঠা বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আহ্বান জানান তিনি। ডাঃ ইকবাল আর্সালান নতুন করে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ আর অনুমোদন না দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোতে তীব্র শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় ডাক্তার তৈরি হচ্ছে না। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে নার্স সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। বিএমএ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ দর্শনার্থীদের বিষয়ে বলেন, রোগী প্রতি দুইজন এ্যাটেডেন্ট রাখা যেতে পারে। হাসপাতালে গত তিন মাসে ৮১ জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
×