ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ার সংসদ সদস্য, মন্ত্রিত্ব নিয়ে ভিন্নমত দুই পক্ষের

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৫ জুন ২০১৫

মায়ার সংসদ সদস্য, মন্ত্রিত্ব নিয়ে ভিন্নমত দুই পক্ষের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে বেকসুর খালাস সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায় প্রকাশের পর দুদক আইনজীবী ও মায়ার পক্ষের আইনজীবী ভিন্ন ভিন্ন মত প্রদান করেছেন। দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম খান বলেছেন, সাজা বহাল এ কথা বলা যাবে না। আপীলে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে ‘এ অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী মায়ার সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিত নয়। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলাপের সুযোগ আছে।’ অন্যদিকে মায়ার আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেছেন, সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী পদে থাকতে সমস্যা হবে না। মায়ার মামলার আপীল যেহেতু এখনও বিচারাধীন তাই সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ যাবে না। সংবিধানের ৬৬ ধারার ২ দফার (ঘ) উপদফা মায়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে দেয়া আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের তিন বিচারপতি ১৪ জুন দুদকের করা লিভ টু আপীল মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায় বাতিল হয়ে যায়। সাত বছর আগে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ১/১১ সরকারের সময় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন। একই সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা এবং তার প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াফত করার আদেশ দেন আদালত। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দচন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় বাতিল করে আদেশ দেন। এর আগে ২০০৭ সালের ১৩ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক নূরুল আলম সূত্রাপুর থানায় মায়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মায়ার বিরুদ্ধে ২৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপীল বিভাগে গেলে ১৪ জুন পুনঃ শুনানির এ আদেশ দেয়া হয়। রায় প্রকাশের পর দুদক আইনজীবী খোরশেদ আলম খান বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, খালাসের রায় বাতিলের পর সংবিধানের ৬৬/২(ঘ) অনুচ্ছদ অনুসারে তার (মায়া) মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ থাকতে পারে না। এটি একটি বিতর্কের বিষয়। সুতারং এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে। তিনি এও বলেন, সাজা বহাল এ কথা বলা যাবে না। আপীলে এখনও বিচারাধীন। অন্যদিকে মোফাজ্জল হোসেন মায়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মায়ার মামলার আপীল যেহেতু এখনও বিচারাধীন তাই সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ যাবে না। সংবিধানের ৬৬ ধারার ২ দফার (ঘ) উপদফা মায়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’ ওই ধারার ২ দফার ঘ উপদফায় বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি “তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দু’বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।” সংবিধানের ৬৬(২) ঘ ধারায় বলা হয়েছে, “তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে। আইনজীবীগণ বলেছেন, সেক্ষেত্রে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কোন দ- ভোগ করেননি। একই সঙ্গে তার নিম্ন আদালতের দ- স্থগিত রয়েছে। আপীলে মামলাটি এখনও বিচারাধীন। কাজেই মায়ার বিষয়ে সাংবিধানের ৬৬(২) ঘ প্রযোজ্য হবে না।
×