ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঁশের কেল্লা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২২ জুন ২০১৫

বাঁশের কেল্লা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতি

আশা করি এই লেখাটা তোমরা পড়বে। জ্ঞান অর্জনের জন্য মুহম্মদ (সা) চীন পর্যন্ত যেতে বলেছেন। তোমরা দেশী লেখকের লেখাও পড়বে অবশ্যই। প্রথমেই তোমাদের একটা প্রশ্ন করি। তোমরা সবাই কি অন্য ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম, মুহম্মদের (সা) আদেশ-নির্দেশ কোরান-হাদিস পড়ার পর ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছ? ধরা যায়- এর উত্তর হবে- না। অর্থাৎ তোমরা সবাই ইসলাম ধর্মটি লাভ করেছ তোমাদের বাবা, মা মুসলিম বলে, বাবা-মার কাছ থেকেÑ তাই না? অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে। তাহলে দেখা যায়, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ- নারী, পুরুষ, শিশু যার যার বাবা, মার কাছ থেকেই নিজের ধর্মটি লাভ করেছে। ধর্মগুলো সৃষ্টি হওয়ার পর এটি তোমাদের চিরন্তন সত্য হিসেবে মেনে নিতে হবে। সুতরাং এই একই নিয়মে হিন্দু হিন্দু হয়েছে, খ্রীস্টান খ্রীস্টান হয়েছে, বৌদ্ধ বৌদ্ধ হয়েছে, শিয়া শিয়া হয়েছে, সুন্নি সুন্নি হয়েছে। আমার জানা মতে, দেখা মতে কোনদিন কোন হিন্দুকে বা বৌদ্ধকে শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে হত্যা করেছে বা মুসলমানের জায়গা-জমি দখল করেছে, এমন দেখিনি। ১৯৪৭-এ মুসলিম লীগের ডাকে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তির সময়ে ডাইরেক্ট এ্যাকশনের নামে কলকাতা, পাঞ্জাব, বিহার, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন প্রদেশে, জেলায় সন্ত্রাসী, গু-াবাহিনী কোন জেলায় হিন্দুর ওপর, কোন জেলায় মুসলমানের ওপর হামলা চালিয়েছিল, খুন করেছিল, নারীদের ধর্ষণ করেছিল। যারা এই অমানবিক ঘৃণ্য কাজগুলো করেছিল তারা কোন সভ্য, শিক্ষিত, রাজনীতিক ছিল না। তারা ছিল দুই ধর্মেরই খুনী, গু-াবাহিনী, এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। নিরীহ, যারা কোন অপরাধ করেনি, যারা তোমাদের মতোই বাবা-দাদা-মার ধর্মের উত্তরাধিকারী হিসেবে হিন্দু ও মুসলমান হয়ে জীবনযাপন করছিল, তাদেরকে, এমনকি দুধের শিশু যারা পাপ-পুণ্য কিছু বোঝে না, যারা অপরাধ করতে শেখেনি, তাদের পর্যন্ত অপর ধর্মের গু-া-খুনী-অপরাধীরা হত্যা করেছিল! ভারতে ও পাকিস্তানে যে ভয়াবহ দাঙ্গা দুই ধর্মের কিছু সুযোগসন্ধানী, লোভী ব্যক্তি এবং রাজনীতিক ক্ষমতার লোভে অপরের সম্পত্তি, ভূমি, বাড়ি দখল করতে ওই গু-াদের এসব অনৈসলামিক চরম গুনাহ্র কাজে উস্কানি দিয়েছিল। এর বিপরীতে শিক্ষিত শ্রেণী-শিক্ষক, কবি, শিল্পীর নাম আমরা খুঁজে পাই না যারা এসব গুনাহর কাজে যোগ দিয়েছিল। এ থেকে এই প্রমাণ হয়, শুধু এদেশে নয়, এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ও প্রাচীন যুগে, মধ্য যুগে, আধুনিক যুগেও কোন শিক্ষিত, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী কেউ কোনক্রমেই পরধর্মের, স্বধর্মের নিরপরাধ-নিরীহ মানুষদের দূরে থাক, খুনী-অপরাধীকে কখনও খুন বা হত্যা করেনি! ’৭১-এ মুজাহিদ, নিজামী, সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লা, সাঈদীরা মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালী হিন্দু-মুসলমানের ওপর যে নির্মম, অমানবিক, অকল্পনীয় নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা, ধর্ষণ করেছিল, তা এক কথায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বর্বরতার উদাহরণ। নিশ্চয় জানো যে, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে, যেটি আলবদরের বন্দীশালা ও টর্চার সেল হিসেবে ’৭১-এর মে মাস থেকে ব্যবহৃত হয়েছিল, সেটিতে এক বস্তা শুধু মানুষের চোখ পাওয়া গিয়েছিল! ভাবতে পার, কত বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করার আগে কত কষ্ট দিয়ে তাদের চোখ উৎপাটন করেছিল ওই ঘৃণ্য অমানুষেরা! এ যুগের তরুণদের মডেল ওই ঘৃণ্য খুনীরা কি হতে পারে! ’৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হওয়ার জন্য যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য হয় তার কারণ নিশ্চয়ই তোমাদের জানা আছে। যদি তা না জেনে থাক তাহলে সংক্ষেপে এটুকু জান যে- ১) পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ থেকে কাঁচামাল, যেমন সুতা, তুলা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে ওখানে স্থাপিত বস্ত্রকলে কাপড় উৎপাদন করে সেসব বস্ত্র বাংলাদেশে এনে বিক্রি করা হতো। ফলে সস্তা কাঁচামাল কিনে উচ্চমূল্যে বাঙালীদের পশ্চিম পাকিস্তানী কাপড় কিনতে হতো। ২) ওরা শুরুতেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে সিন্ধু নদের ওপর ব্যারাজ দিয়ে মরুময় পাঞ্জাবকে শস্যভা-ার করে তুলেছিল। অথচ বাংলাদেশে গঙ্গার পানি চুক্তি, গঙ্গা ব্যারাজ চুক্তি বাঙালীদের হিন্দু ও ভারত তোষণের নাম দিয়ে এ চুক্তি করতে অব্যাহতভাবে বাধা দিয়ে গেছে। ৩) ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে পাকিস্তানী শাসকরা বারবার বাঙালীদের বিরুদ্ধে বিহারীদের, হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একমুখী হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দিয়ে গেছে। দেখা গেছে- গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে গেলেই পাকিস্তানী জেনারেলরা বারবার সরকারকে পদচ্যুত করে ক্ষমতা গ্রহণ করে মার্শাল ’ল জারি করেছে। ৪) ধর্মীয় আচার-আচরণে চূড়ান্ত অ-ইসলামী পাকিস্তানী সেনা ও আমলারা সব সময় ‘ইসলাম’কে ক্ষমতায় থাকা, ক্ষমতা দখল করার জন্য ’৪৭ থেকেই ব্যবহার করেছে, যা বাধা দিয়েছিল সীমান্ত প্রদেশের প্রকৃত উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ধার্মিক নেতা খান আবদুল গাফফার খান, তাঁর পুত্র ওয়ালী খান, সিন্ধু, বালুচিস্তান প্রদেশের রাজনীতিকরা। ৫) ’৭০-এর অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, জহুর আহম্মদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ একঝাঁক নক্ষত্রসম দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রমুখী ও ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী রাজনীতিকের জন্ম ও উত্থান হয়েছিল। সে সময় ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল অসাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন প্রমুখ, যাদের দ্বারা ৬ দফা প্রচারের কারণে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা ও আমলারা বাঙালীর হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দিতে অসম্মত ছিল। বারবার সংলাপে বসেও তারাই সংলাপে এমন শর্ত জুড়ে দিত যে, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালী নেতা-ছাত্রনেতাদের পক্ষে সেসব শর্ত মানা সম্ভব হতো না। সংলাপের আড়ালে তারা প্লেন বোঝাই করে সৈন্য এনে বাংলাদেশের সেনানিবাসগুলো ভর্তি করে ফেলছিল। অবশেষে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা অতর্কিত হামলা শুরু করে! বাঙালীদের ওপর, বিশেষত বাঙালী সেনা সদস্য, ইপিআর, পুলিশ সদস্যের ওপর, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে ভারি অস্ত্রের গুলিবর্ষণ করে ওই এক রাতেই হাজার হাজার বাঙালী নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে! সেদিন থেকেই বাঙালী সেনা, পুলিশ, ইপিআর, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, বাঙালী দেশপ্রেমিক রাজনীতিকরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। এভাবে ’৭১-এ বাঙালী স্বাধীনতার লড়াই শুরু করে। দেশের ভেতরে যেহেতু চারদিকে পশ্চিমা সৈন্যরা উপস্থিত ছিল, হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল, সে কারণে বাঙালী তরুণদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, আশ্রয়, অস্ত্র-গোলাবারুদের জন্য ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছিল। ভারত সরকার, ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর সহযোগী কর্মকর্তারা বাঙালীদের ওপর সংঘটিত পাকিস্তানীদের এই চরম নির্যাতন, বর্বর হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে বাঙালীদের রক্ষার লক্ষ্যে তাদের সাহায্যে অবস্থান গ্রহণ করে। এরই ফলে ১ কোটি সাধারণ বাঙালী নারী-পুরুষ-শিশু, যারা প্রাণ বাঁচাতে ভারতে প্রবেশ করেছিল, তাদের পশ্চিমবঙ্গ, আগরতলা-ত্রিপুরা, অসমে আশ্রয় দেয়, খাদ্য ও চিকিৎসা দেয় ভারত সরকার, যাতে সহায়তা করেছিল বিভিন্ন দেশের দাতব্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার। প্রধানত ভারতীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ-অস্ত্র সহায়তায় আমাদের কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত মুক্তিবাহিনী গঠন করে। স্মরণ রাখতে হবে- এ যুদ্ধে আমাদের অনেক দক্ষ সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বগুণে এই মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়। যাদের মধ্যে খ্যাতিমান হয়েছেন প্রথমত খালেদ মোশাররফ, কর্নেল তাহের, মনজুর আহমদ, শফিউল্লাহ, জিয়াউদ্দীন, শেখ মনি, কাদের সিদ্দিকী, জলিলসহ আরও অনেক দেশপ্রেমিক অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশ লাখ মুক্তিযোদ্ধা, বাঙালী নারী-পুরুষ-শিশু এ যুদ্ধে নিহত হয়। ডিসেম্বরের শেষদিকে নিজামী-মুজাহিদের নেতৃত্বে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়! এই ত্রিশ লাখ বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে এবং ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা রুমী, বদি, জুয়েল, আলতাফ মাহমুদের প্রাণের বিনিময়ে, বুদ্ধিজীবীদের প্রাণের বিনিময়ে, নারীদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানী সেনারা ভারতীয় সেনাসহ মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পরাজয়বরণ করে! বাংলাদেশের স্বাধীনতা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসী- সবার রক্তে রঞ্জিত। কিন্তু এ স্বাধীনতার শত্রু ছিল একমাত্র জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগের রাজাকার, আলবদর, আলশামসের খুনী বাহিনী তৈরি করা বাঙালী নেতারা, যারা আজ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারে দণ্ডিত হচ্ছে। ওপরের এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাঠ করার পর এই যুগে জন্মগ্রহণ করা তোমাদের মতো একটি তরুণ দল সেই প্রাচীন ’৭১-এর মিথ্যা ইসলাম রক্ষার দোহাই দেয়া, স্বদেশের স্বাধীনতাকামীদের হত্যা করা, নারীদের ধর্ষণ করা, কলুষিত চরিত্রের অনৈসলামিক গুনাহ্র কাজ করা ব্যক্তিদের, ইসলামের মিথ্যা ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হওয়া কি কোনভাবে সাজে? কেন তোমরা নিজেরা স্বউদ্যোগে কোরান-হাদিসের বিশ্বাসযোগ্য তর্জমাগুলো পাঠ করে ইসলামের সঠিক শিক্ষাটি জেনে নিচ্ছ না? তোমরা কি নিরক্ষরের মতো অন্যের কথায় চলবে? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা অন্যের কথায় যে প্রগতিশীল ব্লগারদের হত্যা করছ, এটা তোমাদের ওরা এ যুগের ‘আলবদর’-এ পরিণত করে তাদের অতীতের ভুলকে ‘শুদ্ধ’ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে করছে। খেয়াল করে দেখ- রাজিব হত্যাকারী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ওই হত্যাকা-কে শয়তান, হত্যার পরিকল্পনাকারীর শেখানো ‘ইমানী দায়িত্ব’ বলে জানায়! তারা বা তোমরা নিশ্চয়ই এতটা বোকা নও যে, কোন ব্যক্তিকে সে যদি অন্য ধর্মের অনুসারী হয় বা নাস্তিক হয় বা যুক্তিবাদী বিজ্ঞানের তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়, তাকে ‘ইমানী দায়িত্ব’ বলে হত্যা করা যায় না। ‘ইমান’ অর্থ তো বিশ্বাস। ইসলামের মূল ইমান হলো- ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।’ তাহলে এ থেকে কি বোঝা যায়? বোঝা যায় যে, বিধর্মী বা নাস্তিক এমন কোন মানুষকে হত্যা করা কিন্তু ‘ইমানী দায়িত্ব’ হতে পারে না। এটি আরেকটি ভাঁওতাবাজি, যেমন জামায়াতি যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তানকে ‘ইসলামের ঘর’ বলে, ‘ইসলামকে রক্ষা’ ইত্যাদি মিথ্যাচার করে স্বদেশের স্বাধীনতাবিরোধী একদল বাঙালী রাজাকারের জন্ম দিয়েছিল! সেটাও ভাঁওতাবাজি। ‘ইমানী দায়িত্ব’ বলে হত্যা করাও ভাঁওতাবাজি, যা তোমাদের অজ্ঞতার কারণে, তাদেরকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করার কারণে ঘটেছে। ‘বাঁশের কেল্লা’, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের আহ্বান করবÑ নিজে নিজে ইসলাম এবং দেশের ইতিহাসকে জান, তথাকথিত কপট ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভুল, মিথ্যা ইসলাম অনুসরণের পথ পরিত্যাগ কর। কেন তোমরা এই নতুন, তথ্যপ্রযুক্তির, বিজ্ঞান ও জ্ঞানের যুগে চল্লিশ বছর আগের ‘আলবদর’-এর প্রেতাত্মা হয়ে আবার ’৭১-এর মতো দেশের অগ্রগণ্য, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে অগ্রসর ব্যক্তিদের হত্যা করতে উদ্যত হচ্ছ? এতে আর যাই হোক, তোমরাই যুগের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বৃদ্ধদের মতো পিছিয়ে পড়ছ। আর এটা তো অবশ্যই চিরন্তন সত্য যে- ‘খুন’ একটি বড় ধরনের অপরাধ। খুনের অপরাধী সে যদি রাজার ছেলেও হয়, তাহলেও তার বিচার হবেই। বিচার ও দণ্ড থেকে কোন খুনী কখনও রক্ষা পাবে না। আর পলাতকের জীবনের মতো যন্ত্রণার, অস্থিতিশীল কি আর হতে পারে? দেখ চল্লিশ বছর পর হলেও খুনী, গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী কি বিচার এড়াতে পেরেছে? সবশেষে, তোমাদের একটি শব্দের সঠিক অর্থ জানতে হবে! ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বলতে স্বল্পশিক্ষিত মৌলানারা তোমাদের ‘ধর্মহীনতা’ বোঝায়! আসলে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র শুদ্ধ অর্থ হচ্ছে- ‘ধর্ম থাকবে ব্যক্তির জীবনে, রাষ্ট্রের কোন কাজে ধর্ম ব্যবহৃত হবে না।’ অর্থাৎ ধর্ম ব্যক্তির নিজের, রাষ্ট্র সবার, সব ধর্মের মানুষের। জান তো, বঙ্গবন্ধু অসম্ভব ধার্মিক ছিলেন, তেমনি ধার্মিক হচ্ছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজে জান, নিজে বোঝ, নিজেই নিজের জন্য কর্ম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর। অন্যের হাতে, অন্যের স্বার্থে নিজেকে পুতুলের মতো ব্যবহৃত হতে দিয়ে সমাজে কলঙ্কিত হয়ো না। তোমরা জান, জেএমবির খুনী নেতারা ফাঁসিতে প্রাণ দিয়েছে। আরও অনেক জঙ্গী খুনী একই পথে যাবে। সম্প্রতি ’৭১-এর আলবদরের মতোই বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা কোন একটি যুদ্ধাপরাধী দল প্রণয়ন করেছে, যাতে দেশের সেরা সন্তানদের নাম রয়েছে। তার মানে আবার চল্লিশ বছর পরও বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার সেই জামায়াতি পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম, যেটি ’৭১-এও যুদ্ধাপরাধী দল ছিল। এবার তোমরা তোমাদের স্বদেশের, স্বজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্ষা করতে ওই তালিকা প্রণেতাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং বাংলাদেশে আলবদরের জন্মবীজ চিরতরে উৎপাটন করবেÑ এ বিশ্বাস রাখছি। আবারও বলব, মানুষ যে কোন সময় ভুল পথ পরিত্যাগ করে সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। সেটি না করে নিজেদের চিরকলঙ্কিত কর না। লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক
×