ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলে এবার আম বাণিজ্য হবে ২০ হাজার কোটি টাকার

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৪ মে ২০১৫

উত্তরাঞ্চলে এবার আম  বাণিজ্য হবে ২০ হাজার কোটি টাকার

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ আম বাণিজ্যের প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে। হাতে মাত্র ৭/৮ দিন। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে আম আসা শুরু হবে। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৩২ লাখ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উদ্যান বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছে অনুকূল আবহাওয়া ও ফালগুনের শুরুতে বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় এবার আমের আশাতীত ফলনের সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছে। যদিও পুরো এপ্রিল জুড়ে একাধিক কালবৈশাখীতে ছোট ছোট গুটি আমের ব্যাপক ক্ষতি ও আম গাছ ভেঙ্গে পড়ায় বহু আম নষ্ট হয়েছে, তারপরেও উৎপাদনে তেমন একটা ধস নামেনি। বিশেষ করে দেশের সর্ববৃহত আম উৎপাদনকারী এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন ছয় লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। কারও কারও মতে আরও বেশি বা দ্বিগুণ। যার কারণে আম বাণিজ্যে তা ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ ছাড়াও আম বাণিজ্যের বাইরেও আরও প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকার বাণিজ্য করবে ঝুড়ি, সুতলিসহ নানন উপকরণ হতে। বিশেষ করে লক্ষাধিক শ্রমিক প্রায় তিন মাসের অধিক সময় বেঁধে আম পাড়া থেকে শুরু করে আড়তে নানান ধরনের কাজ ও পরিবহন থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে বড় অংকের অর্থ আয় করবে। দেশের বৃহত্তম আম বাজার কানসাটে আড়তের সংখ্যা এবার আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সমগ্র জেলায় খুচরা পাইকারি মিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার আমের আড়ত ব্যস্ত সময় কাটাবে। কানসাট আম বাজারসহ সমগ্র জেলা থেকে প্রতিদিন আম ভর্তি প্রায় সাড়ে চারশত ট্রাক গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। বিধায় পরিবহন সেক্টর আম থেকে পৃথকভাবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে ১৬ জেলায় আম বাণিজ্য হবে প্রায় ২০ হাজার কোট টাকার। চলতি মৌসমে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় ৮১ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে নানান জাতের আম চাষ করা হচ্ছে। আর এখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধুমাত্র ২টি জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে এবার আম চাষের আওতায় এসেছে ৪৭ হাজার ২১২ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে প্রায় ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩২৯ টনে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানান এ বছর আম চাষের জন্য অন ইয়ার হবার কারণে ভাল ফলন হয়েছে। শুধু ভাল বললে ভুল হবে শত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে আমের উৎপাদন। এক দিকে অনকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাই আক্রমণ তেমন না থাকায় বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড়, টর্নেডোতে আম ঝরে পড়লেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত এটা উৎপাদনে অনেকটাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করবে। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারসহ আম ব্যবসায়ীরা আসা শুরু করেছে। বিশেষ করে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ একাধিক কোম্পানি হামলে পড়েছে আম কেনার জন্য। বিশেষ করে প্রাণসহ একাধিক কোম্পানি এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার আম কিনবে। অনেকে কিনেছে বাগান। তাই এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় আমের রমরমা ব্যবসা হবে। একটি সমীক্ষা হতে জানা গেছে গত এক বছরে অর্থাৎ এখন পর্যন্ত পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় একাধিক বার হাত বদলসহ প্রায় তিন হাজার আম বাগান কেনা বেচা হতে টাকা লেনদেন হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারী এই অর্থের কোন হিসাব কিংবা রাজস্ব দিতে হয় না আম বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীদের বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
×