ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোলিং এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে পর্যালোচনা চলছে

বিএনপির অধিকাংশ এজেন্ট ভোট কেন্দ্রেই যাননি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

বিএনপির অধিকাংশ এজেন্ট ভোট কেন্দ্রেই যাননি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির এজেন্টদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ঢাকার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা চলছে। ঢাকায় বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হওয়া সব কেন্দ্রের ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সংঘর্ষের সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত ছিল তা জানতেও ফুটেজ পর্যালোচনা চলছে। বেশ কয়েকটি ফুটেজে বিএনপি প্রার্থীর ছবি সংবলিত কার্ড ঝুলিয়ে খুব কম জনকেই ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ এজেন্টরা ভোট কেন্দ্রেই যাননি। তারা বিএনপির সংশ্লিষ্টদের নেতাদের কেন্দ্রে না ঢুকতে দেয়ার মিথ্যে অভিযোগ করেন। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারাও নির্বাচন বর্জনের আগাম পরিকল্পনার বিষয়টি জানতে পেরে এজেন্টরা পরিকল্পিতভাবে ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে অভিযোগ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৯৮২টি। এর মধ্যে ১৪২৯টিই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। ঢাকার নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা তদারকি করতে বসানো হয়েছিল সচিবালয়ের পাশে আব্দুল গনি রোডে স্থাপন করা হয়েছিল প্রধান কন্ট্রোলরুম। আর গুলশান, তেজগাঁও এবং মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে একটি করে সাব কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছিল। চারটি কন্ট্রোলরুমের আওতায় ছিল সিসি ক্যামেরাগুলো। নির্বাচনে বংশাল থানাধীন সুরিটোলা সরকারী প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। একটি ব্যালটবাক্স ভাংচুর করা হয়। বিদ্যালয়টির তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার কবি নজরুল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বোমাবাজির কারণে ভোট গ্রহণ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত ছিল। কাফরুলে উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে একটি ব্যালটবাক্স ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া টিকাটুলী মিতালী স্কুল কেন্দ্রের সামনে পর পর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ, খিলগাঁও মির্জা আব্বাস মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রমনার ইস্কাটনে ইস্পাহানী স্কুল, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসাবো কমলাপুর হাই স্কুল, হাজারীবাগ ও উত্তরাসহ ১০-১৫টি বিভিন্ন সময় ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দুপুর বারোটা নাগাদ বিএনপি ভোট কেন্দ্রে তাদের এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া এবং কারসাজির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। ভোট চুরি, জালভোট প্রদান, আগের রাতেই ভোট দেয়া ও ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগও তোলা হয়। যদিও নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার যে কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সেসব কেন্দ্রে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজের নানাভাবে পর্যালোচনা চলছে। প্রকৃত হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। হামলাকারীরা মূলত কারা, কি উদ্দেশ্যে হামলা করেছিল, হামলার ধরন, হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলার ধরন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব পরিকল্পিত হামলা। নির্বাচন কমিশন যাতে নির্বাচন কেন্দ্র বাতিল করতে বাধ্য হয়, সেই রকম পরিকল্পনা মোতাবেক হামলা করা হয়েছে। হামলার চেয়ে ভোট কেন্দ্রগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে অধিক পরিমাণে। এছাড়া ফুটেজে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেখা যায়নি। সাধারণত এজেন্টদের গলায় প্রার্থীর তরফ থেকে দেয়া ছবি ও মার্কা সংবলিত যে বড় কার্ড ঝুলানো থাকার কথা তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপির এজেন্টরা নির্বাচন কেন্দ্রেই প্রবেশ করেননি। তারা নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি আগাম জেনেও এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষের যে দু’চারজন এজেন্ট প্রবেশ করেছেন, তারা গলায় থাকা কার্ড অনেক অনেক দূর থেকে খুলে সাধারণ ভোটারের মতো নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। ফলে তারা কোন প্রার্থীর এজেন্ট তা বুঝার উপায় নেই। এজেন্টদের প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টির কোন দৃশ্য ফুটেজে ধরা পড়েনি। মূলত বিএনপির এজেন্টরা নির্বাচন কেন্দ্রেই যাননি। তারা কেন্দ্রে না গিয়েই প্রার্থীদের কাছে বা দলীয় নেতাদের কাছে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
×