ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুয়েটে নিয়োগ পেয়েও যোগ দিতে পারছেন না শিক্ষক নীলোপল অদ্রি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ মার্চ ২০১৫

বুয়েটে নিয়োগ পেয়েও যোগ দিতে পারছেন না শিক্ষক নীলোপল অদ্রি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। প্রতিক্রিয়াশীলদের তৎপরতার নানা বিতর্কের পর এবার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েও তাকে কাজে যোগদানে বাধা প্রদানের উদ্বেগজনক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যোগ্যতাবলে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এমনকি সিন্ডিকেটের অনুমোদনের পর নিয়োগপত্র পেয়েও দুই মাস ধরে কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শিক্ষক। ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষকের যোগদানে বাগড়া বাধিয়েছেন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন। অথচ এখন আর আপত্তির কোন সুযোগই নেই। যোগদানের বিপক্ষে কোন যুক্তি নেই উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছেও, তবু নেই সঙ্কটের সমাধান। ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ অভিহিত করে সরব হয়েছেন বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অদ্ভুত এক দাবি তুলে বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলছেন, শিক্ষকের বিষয়ে আপত্তি আছে। কারণ সে সাধারণ মানের শিক্ষক। অথচ পরীক্ষার সময় নিয়োগ কমিটির সব সদস্যের মতো এ চেয়ারম্যানও ওই প্রার্থীকে মেধা ও যোগ্যতার কারণে নির্বাচন করেছেন। নিয়োগে জটিলতা বাধানোর আশায় বিশেষ একটি গ্রুপ এখন ওই প্রার্থীকে ‘নন বুয়েটিয়ান’ (গ্রাজুয়েট অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে) বলে প্রচার করছে তবে জানা গেছে, খোদ ওই বিভাগের চেয়ারম্যানও গ্রাজুয়েশন করেছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এ ঘটনা নিয়ে অসন্তোষের আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম নীলোপল অদ্রি। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বুয়েট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এখন কেবল ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষা। নীলোপলের দুটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনাসহ ১০টি প্রকাশনা আছে। এই বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি বুয়েটেরই পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটে পোস্ট ডক্টরাল গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুয়েটের এ ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুলাই প্রার্থীদের নিয়োগে সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হয়। এখানে দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শক্তিশালী নিয়োগ কমিটির কাছে পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে হয় বলে বলা হয়ে থাকে। মেধার যোগ্যতায় কমিটি নীলোপল অদ্রি ও মাশরুর রহমানকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে এবং এস এম লাবিবকে প্যানেলভুক্ত করে রাখে। এরপর ৩১ ডিসেম্বর বুয়েটে সিন্ডিকেট নীলোপল অদ্রি ও মাশরুর রহমানের নিয়োগ চূড়ান্ত করে। ১০ জানুয়ারি তাদের দেয়া হয় নিয়োগপত্র। দুজনের মধ্যে মাশরুর বিভাগে যোগ দিয়ে ক্লাসও নিচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগপত্র নিয়ে ১৮ জানুয়ারি নীলোপল যোগদানের জন্য গেলে বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাকিল আখতার তার যোগদানপত্র গ্রহণে আপত্তি করে বসেন। এরপর নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক রেজিস্ট্রারের কাছে যোগদানপত্র জমা দেন। বুয়েট সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়াসহ সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শাকিল আখতার অদৃশ্য কারণে প্রার্থীর যোগদানপত্র গ্রহণে আপত্তি শুরু করেন। অথচ আজ পর্যন্ত এর কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। যার নেই কোন আইনগত ভিত্তিও। তারপরও বাছাই কমিটির সভাপতিকে একটি চিঠি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বুয়েটের স্নাতক এসএম লাবিব স্নাতকে জিপিএ ৩.৮৬ পেয়েছেন। আর জাহাঙ্গীরনগরের স্নাতক নীলোপলের জিপিএ ৩.৯৪। নীলোপল সাধারণ মানের ছাত্রী।‘ ভুক্তভোগী এ শিক্ষক নীলোপল অদ্রি জনকণ্ঠকে বলছিলেন, আমি এখনও আশাকরি দ্রুত বিষয়টির সুরাহা হবে। আমার এক সময়ের যারা স্যার তারাই এখন আমার কলিগ। আমি তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কোন মনোভাব পোষণ করিনি কখনও। কিন্তু জানি না কি কারণে চেয়ারম্যান স্যার বা অন্যরা এমন করছেন। আমি জানি না কি আমার অপরাধ বা অযোগ্যতা। তবে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।’ নিয়োগ চূড়ান্ত করার শত্তিশালী কমিটির সদস্য ছিলেন প্রকৌশল অনুষদের ডীন ড. মোহাম্মদ মনোয়ার উল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, আসলে আমরা নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে প্রার্থী ঠিক করে দিয়েছি। এখন সে কাজে যোগ দেবেন এটাই সাভাবিক। তারপরও যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তা দেখবে কর্তৃপক্ষ। তবে কমিটির এখানে আর দায়িত্ব নেই। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একেএম মাসুদও বলছিলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। সমস্যা কোথায়? কেন বিভাগীয় প্রধান আপত্তি করছেন? আর এখন আপত্তি করার কোন সুযোগ আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না এখন আর সেই সুযোগ নেই। নিয়োগ চূড়ান্ত। কাজে যোগদান এখন তার অধিকার। আমরা দেখতেছি। অন্যদিকে বুয়েটের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা ইকরাম ভুক্তভোগী নারী প্রার্থীর ভোগান্তির কথা বলছিলেন এভাবে, ‘আমরা চেষ্টা করছি। তবে ওই বিভাগের কেউ তাকে চায় না। কিন্তু এখন নিয়োগ হয়ে যাওয়ার পর কোন আপত্তির সুযোগ আছে? এ প্রশ্নের উত্তরের উপাচার্য বলেন, না। এখন অবশ্য নিয়োগে বাধার সুযোগ নেই।’ তাহলে চেয়ারম্যানের আপত্তি কেন? এর উত্তর নেই প্রার্থীর মতো উপাচার্যের মতো উপাচার্যের কাছেও। তারপরও একটা সমাধান হবে বলে আশা উপাচার্যের।
×