ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও এক বাংলাদেশীকে অপহরণ করেছে আইএস

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১১ মার্চ ২০১৫

আরও এক বাংলাদেশীকে অপহরণ করেছে আইএস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লিবিয়ার উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় সিরাত শহরে একটি তেল খনিতে হামলা চালিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের হাতে অপহৃত নয়জনের মধ্যে আরও একজন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আইএসের হাতে বাংলাদেশের দু’জন নাগরিক অপহৃত হওয়ার খবর পাওয়া গেল। গত শুক্রবার সিরাত শহরের দক্ষিণে আল গানি তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে আইএসের বন্দুকধারীরা ওই নয়জনকে অপহরণ করে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লিবিয়ায় অপহৃত দ্বিতীয় বাংলাদেশীর নাম মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি নোয়াখালী। পাসপোর্ট নম্বর এ-ই-৩৬৩০৭৫৪। আনোয়ারকে প্রথমে সুদানের নাগরিক বলে ভাবা হলেও পাশের আরেকটি তেলক্ষেত্রের এক নাগরিকের মাধ্যমে অপহৃত এ বাংলাদেশীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। লিবিয়ায় আল গানি তেলক্ষেত্রে আইএস বন্দুকধারীদের হামলা চালানোর পরে ২১ বাংলাদেশী নাগরিককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হেলাল উদ্দিন নামে একজন বাংলাদেশী নাগরিক লিবিয়ায় অপহৃত হয়েছে। হেলাল উদ্দিনের বাড়ি জামালপুরে। তার পাসপোর্ট নম্বর বি-০১৫৬৫৫৩। ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারকে দু’জনের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা ওই তেল খনির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি ভিএওএস এবং লিবিয়ার ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। আইএস জঙ্গীগোষ্ঠীর হাতে কোন বাংলাদেশী জিম্মি হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। এদিকে গাল্ফ নিউজ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় দুটি বিবাদমান পক্ষ বেশ কিছুদিন ধরে আল গানি তেলক্ষেত্র এলাকা দখলে নেয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে আসছে। এর সুযোগ নিয়ে শুক্রবার আইএস জঙ্গীরা ওই তেলক্ষেত্রে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। ইসলামী জঙ্গীরা ওই তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে ১১ জন নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের ধর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ওই তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর নয়জন কর্মীর অপহৃত হওয়ার বিষয়টি জানা যায়। অপহৃতদের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়া, বাংলাদেশ ও ফিলিপিন্সের কর্মী রয়েছেন। গত বছর ইরাক ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বড় একটি এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে খিলাফত কায়েমের ঘোষণা দেয় আইএস, যার মধ্য দিয়ে নতুন করে বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদের উত্থানের শঙ্কা তৈরি হয়। সিরিয়া ও ইরাকে এ জঙ্গী দলটির হাতে নিহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মিশর, জর্ডান ও তুরস্কের অর্ধশতাধিক নাগরিককে জিম্মি করার পর তাদের শিরোñেদ করে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশ করেছে এ সন্ত্রাসীরা। জর্ডানের এক পাইলটকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার পরও তারা একই কাজ করেছে। এ সব ঘটনায় জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে সাধারণত নিজেদের বন্দী সদস্যদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে আইএস। তবে জাপানী জিম্মিদের ক্ষেত্রে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। আনোয়ারের পরিবারে উদ্বেগ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী থেকে জানান, লিবিয়ায় ইসলামী স্টেট আইএসের হাতে অপহৃত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আনোয়ার হোসেন লিটনের পরিবারে ভর করেছে উদ্বেগ আর আতঙ্ক। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই আনোয়ারদের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের গয়েচপুর গ্রামের আমজাদ হাজির বাড়িতে উদ্বেগাকুল স্বজনদের ভিড় বাড়তে থাকে। সর্বশেষ খবর জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিবেশীরাও ছুটেছেন ওই বাড়িতে। বিকেলে গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় লেগে যায় ওই বাড়িতে। ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় আনোয়ারের বৃদ্ধ পিতা মোঃ ইউনুছ (৭৫) আর মা আফরোজা বেগম (৬৩) ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আনোয়ারের ছোট ভাই আমির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সর্বশেষ তার ভাবীর (আনোয়ারের স্ত্রী) সঙ্গে কথা হয়।
×