ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধের হামলায় আরও দু’জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবরোধের হামলায় আরও দু’জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ ও হরতালে অবরোধকারীদের হামলায় আরও দু’জন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো। ভৈরবের লুৎফর রহমান (৩৫) ও বগুড়া জেলার কাহালু থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ট্রাক হেলপার জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। শুক্রবার দু’জনেরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। টানা ১৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভৈরবের লুৎফর রহমানের মৃত্যু হয়। আর ৩৫দিন মৃত্যু সঙ্গে লড়ে একইদিন ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বগুড়ায় পেট্রোলবোমায় মারাত্মক দগ্ধ জাহাঙ্গীর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে টানা ৫৪ দিন অবরোধে সারাদেশে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্যসহ ৬০ জন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫৭০জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জানান, লুৎফর রহমানের শরীরের ৭০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তার শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রবিবার দুপুর ১২ টার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, চলমান সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে। ভৈরবের অবরোধকারীদের হামলায় নিহত লুৎফর রহমানের বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান। গাইবান্ধা জেলা সদরের কুমিরাভিটা এলাকায় তার বাড়ি। নিহতের ভাই আব্দুল মালেক জানান, সিলেটের মৌলভীবাজারে কৃষিকাজ করার পাশাপাশি রিকশা চালাতেন তিনি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি বাসে মৌলভীবাজার থেকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় যাচ্ছিলেন লুৎফর রহমান। ওইদিন রাত ১টার দিকে বাসটি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকায় পৌঁছলে হরতাল ও অবরোধ সমর্থকরা গাড়িটিতে ককটেল ও ইট নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। এ সময় লুৎফরের মাথায় কাঁচ, ইট ও ককটেলের স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ওইদিনই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লুৎফর রহমানের মৃত্যু হয়। পরে তার লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে নেয়া হয়। পরে দুপুরে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতের ভাইয়ের ছেলে আনোয়ার হোসেন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে লুৎফরের মৃতদেহ দাফনের জন্য তার গাইবান্ধার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। এদিকে বগুড়ায় পেট্রোলবোমায় দগ্ধ নিহত ট্রাক হেলপার জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার কাহালু থানার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জানান, জাহাঙ্গীরের শরীরের ৪৬ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তার শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, চলমান সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেনের মৃত্যুর সঙ্গে তার সংসার তছতছ হয়ে গেছে। দুই সন্তান এতিম হয়ে গেছে। স্বামীকে হারিয়ে বিউটি আক্তার বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনের কান্নায় বার্ন ইউনিটে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরের লাশের পাশে তার স্ত্রী বিউটি আক্তারকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন তার স্বজনরা। পাশে তার ভাতিজা মামুন জানান, ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে বগুড়ার চারমাথা এলাকায় হরতাল ও অবরোধকারীরা পেট্রোলবোমার ট্রাকে ছুড়ে মারে। এতে ট্রাক চালক মাসুদ (৩৫) ও হেলপার চাচা জাহাঙ্গীর (৩০) মারাত্মক দগ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই রাতেই তাদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি জানান, ওদিন রাতে খালি ট্রাক নিয়ে গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মেদ স্টেশন থেকে চারমাথা হয়ে কাহালু যাওয়ার পথে চাচা জাহাঙ্গীরের ট্রাকটি অবরোধারীদের পেট্রোলবোমার শিকার হয়। টানা ৩৫দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় চাচা জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। ওই ট্রাক চালক মাসুদ এখনও ঢামেকে চিকিৎসাধীন। চালক মাসুদ জাহাঙ্গীরের ভগ্নিপতি। নিহত জাহাঙ্গীর এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক ছিলেন।
×