ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আউট সোর্সিংয়ে ৪ লাখ তরুণ, আয় ২১ মিলিয়ন ডলার ;###;আইসিটি খাতে আয় ২৫ মিলিয়ন ডলার, চার বছরে এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে

ঘরে বসেই মিলছে সব সরকারী সেবা ॥ ডিজিটাল জোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঘরে বসেই মিলছে সব সরকারী সেবা ॥ ডিজিটাল জোয়ার

এমদাদুল হক তুহিন ॥ সময় বদলে যায়, উন্নয়নের চাকা ঘুরে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই দিগন্ত উন্মোচন হয়েছিল আরও কয়েক বছর আগে। আইসিটি খাতে সরকারের বিশেষ সাফল্যের কারণেই ডিজিটালাইজেশনের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। দিগন্তের উন্মোচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রক্রিয়া ক্রমশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। টং দোকানদার থেকে কোটিপতি, সবার হাতেই ইন্টারনেট সেবা। শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সকলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত। সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অন লাইনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এমনকি প্রতি মুহূর্তেই আপডেট হচ্ছে কোন কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। গত ৬ বছরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুণ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে আউটসোর্সিং খাতেই কাজ করছে ৪ লাখ তরুণ ফ্রিল্যান্সার। আর এই খাত থেকেই আয় হচ্ছে ২১ মিলিয়ন ডলার। আইসিটি খাতে বর্তমানে বাংলাদেশের আয় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, তবে আগামী চার বছরে তা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক বছর আগেও অনলাইন বলতে কি বোঝায় তা বেশিরভাগেরই অজানা ছিল। ঘরে বসে সরকারী অফিসের তথ্য পাওয়া যাবে- তা যেন এক সপ্তম আশ্চর্য। প্রয়োজনীয় কোন সরকারী কর্মকর্তার ফোন নম্বর হাতের নাগালে, তাও যেন আকাশের চাঁদ। বিশ্বের সকল আশ্চর্য ও আকাশের সব চাঁদ এখন এদেশের মানুষের হাতের মুঠোয়। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সাফল্য। মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছেন সরকারী সকল সেবা, সকল তথ্য। ডিজিটালাইজেশনের কারণে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। গত ৬ বছরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া সর্বদিকে ছড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে ৪ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ডিসেম্বর ২০১৪-এর তথ্যমতে, ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইলে এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ২১ লাখ ৭৪ হাজার, ওয়াইমেক্স প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার, আইএসপি ও পিএসটিএন ব্যবহার করে বাকি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বছর শেষে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকের মোট সংযোগের সংখ্যা ১২ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, দেশের সকল উপজেলা, জেলার সরকারী অফিস, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বিভিন্ন দফতরে ওয়েবসাইট চালু আছে। ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক (এনপিএফ)-এর অধীনে এ সকল ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সরকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের সকল কার্যক্রম ওয়েবসাইটে আপডেট করে সরকারী প্রদত্ত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তনের ফলে সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান ই-গবর্নমেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে। তথ্য ও সেবা প্রদানের প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়ে অনলাইনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছে যায়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর আগে ২০১২ সালের ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ই-গবর্নেন্স কার্যক্রম আরও দ্রুত প্রসার ঘটাতে একটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়, এরপর থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ই-গবর্নেন্সের প্রসার ঘটে। বর্তমানে সরকারের সকল কার্যক্রম ই-গবর্নেন্সের আওতাধীন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার সাফল্য এখন সরকারী সকল কার্যক্রমে পরিলক্ষিত। তথ্য ও যোগাগোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে আরও জানা যায়, ২০১০ সালে সরকারীভাবে ৪ হাজার ৫০১ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫১৬। এর মাঝে ২০০ ইউনিয়ন ছিল একেবারেই দুর্গম এলাকা ও বিদু্যুতবিহীন। সরকারী সকল সেবা জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে ওই ২০০ ইউনিয়নের জন্যে আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সার্ক ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (এসডিএফ) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। তবে অভিযোগ রয়েছে সরকারীভাবে সফল এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও এর সুফল অনেকক্ষেত্রেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কোন কোন ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবাগুলো বন্ধ রয়েছে। গ্রামের জনগণের একটি অংশ অর্ধ শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত হওয়ায় সেবাগুলো গ্রহণ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হন, কিংবা প্রদত্ত সেবার জন্যে অধিক অর্থ প্রদান করেন। আইসিটি খাতে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের ধারণা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে তরুণ ফ্রিল্যান্সার একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এই খাতেই দেশ ২১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। লাখো তরুণ বিভিন্ন পর্যায়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ খাত থেকে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করলেও বাংলাদেশে রয়ে গেছে নানা সমস্যা। ফিলিপিন্স, ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর আয় করে আসলেও সম্ভাবনাময় এ খাতে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। পরিসংখ্যানগত বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সরকার তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব লাঘবে এ খাত থেকে আরও বেশি করে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতি আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে জেলা পর্যায়ে ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচী গ্রহণ করে। এছাড়াও এ ধরনের একাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রথম পর্বের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচীতে ১৫ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা রয়েছে। চলমান এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ২০১৫ সালে শেষ হবে। ‘ফ্রিল্যান্সার টু এন্ট্রিপ্রেনিউর উন্নয়ন কর্মসূচী’ নামে এই প্রকল্পটি ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে যে উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়েছে, আউটসোর্সিংয়ে বিরাজমান কিছু জটিলতা দূর করা সম্ভব হলে সেই যাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। একাধিক ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের কিছুু সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশে এখনও চালু হয়নি অন লাইন থেকে আয়ের টাকা উঠানোর মাধ্যম পেপ্যল সেবা। মিরপুরের বাসিন্দা ফ্রিল্যান্সার জহিরুল হক রকি জনকণ্ঠকে বলেন, অন লাইনে বাংলাদেশ ক্রমাগত উন্নয়ন করে চলছে। তবু পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের তুলনায় এখানে ইন্টারনেটের মূল্য অনেক বেশি। টাকা উঠানোর মাধ্যম পেপ্যল চালুর দাবি বহুদিনের, এখনও চালু হয়নি। পেপ্যল চালু হলে ফ্রিল্যান্সারার খুব উপকৃত হবে। পেপ্যল প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এই সমস্যাটি সমাধানে কাজ করছি। কিছু আইনগত জটিলতার কারণে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যায় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে পারব। সরকারী একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারী অফিসের প্রয়োজনীয় তথ্য, ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষার সকল কার্যক্রম, আইন আদালত, রেজিস্ট্রি অফিস, পাসপোর্ট-ভিসা, এয়ারপোর্টের প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সকল তথ্যই সাধারণ জনগণের হাতের নাগালে। জাতীয় ই-তথ্য কোষে সরকারের সকল ধরনের সেবার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। ই-পেমেন্ট, ই-সিগনেচারসহ প্রতিনিয়তই নানা ধরনের নানা প্রযুক্তির সংযোজন ঘটছে। মোবাইল ফোনের বাটনে কয়েকটি টাচ করে যে কোন স্থানে বসে অতি সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহার করেও যে কোন তথ্য অনায়াসেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেটের বিস্তৃতির ফলে ডিজিটাল তথ্যের ভা-ারে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রতি বর্গ ইঞ্চি। পথচারী তার অচেনা গন্তব্য সহজেই চিনে নিচ্ছেন গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে। ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে সবই এখন অনলাইনভিত্তিক। কোন পণ্য পছন্দ শেষে অর্ডার করলেই নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে ভোক্তার ঘরে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নরসিংদীর বাসিন্দা সাইফুল সৌদি গমনের উদ্দেশে ফরম পূরণ করেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশ যাওয়ার জন্যে এত সহজে ও অল্প সময়ে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে পারব, তা কয়েক বছর আগেও ভাবিনি। এর জন্যে বর্তমান সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে হয়। দেশে বর্তমানে নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। অল্প খরচে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে অনায়াসেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তথ্য আদান প্রদান ও ভাবের বিনিময় হচ্ছে। ভিডিওতে কথা বলার জন্যে রয়েছে একাধিক সফটওয়্যার। স্কাইপ, ফেসবুক, গুগুল ছাড়াও যে কোন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থ্রি জি প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সকল ধরনের তথ্য ও ভাবের আদান প্রদান করা যায়। ফেসবুক ও স্কাইপ ব্যবহারকারী জোনায়েত উল্লাহ রনি বলেন, দেশ ডিজিটাল হওয়ার ফলেই বর্তমানে প্রায় সবাই ফেসবুকসহ নানা যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। স্কাইপ ব্যবহার করে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে নয়, অনেক সময় পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও কথা বলি। এর সবই ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে সম্ভব হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, বাংলাদেশে ২০০৯ সালের নবেম্বরে ই-কমার্স চালুর নির্দেশনা জারি করা হয়। ডিজিটালাইজেশনের জন্যে এটি একটি বড় উদ্যোগ। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট যে কোন ব্যবসার অপরিহার্য অংশ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পাদিত ব্যবসায়িক কার্যক্রমই ই-কমার্স। পুরো বিশ্বকে একত্রীকরণের উদ্দেশ্যে এই কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এ খাতে বেশ সাফল্যম-িত হিসেবে প্রতীয়মান। দেশে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের সেবাদানকারী অনলাইন শপিং মল। এসব মল থেকে সহজেই নানা ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই টিকেট ক্রয় করায় ব্যস্ত মানুষেরা খুব বেশি উপকৃত হচ্ছেন। টিকেট কালোবাজারি অনেকটাই কমে গেছে বলে দাবি টিকেট সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার। অন্যদিকে সূত্র মতে, ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে টেলিটক থ্রিজি প্রযুক্তির মোবাইল সেবার বাণিজ্যিক ব্যবহার পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক দিয়ে দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু। অল্প সময়েই ২০১৩ সালের শুরুতে বেসরকারী অপারেটরদের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশের ৬৪ জেলায় থ্রিজি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ হলেও পুরো দেশ এখনও থ্রিজির আওতায় আসেনি। তবে দেশের নানা স্থানে দ্বিতীয় প্রযুক্তির নেটওয়ার্কেই নানা রকম সমস্যা রয়ে গেছে। অন্যদিকে থ্রিজি প্রযুক্তির কিছুটা সম্প্রসারণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফোরজি প্রযুক্তি চালুর ঘোষণাও এসেছে। দেশের সকল কর্মকা-ে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । বর্তমানে এমন কোন কর্মকা- নেই যা অনলাইন ব্যবহার করে সম্পাদিত হয় না। সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি সেবা এখন হাতের মুঠোয়। দেশের যে কোন প্রান্তে বসে পুরো বিশ্বের খবর মুহূর্তেই জেনে নেয়া যায়। অনেকেরই ধারণা প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে ডিজিটালাইজেশনের এই জোয়ার। সংশ্লিষ্ট এই খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশের সাধারণ জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে আকর্ষণের কারণেই দেশ দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি একাধিক ব্যক্তিবর্গের। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণে সরকারের সফলতা প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন। তারপর থেকেই আমরা ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি তত্ত্ব¡াবধানে কোন কোন দফতর কিভাবে কাজ করবে আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারণ করে আইসিটি মন্ত্রণালয় গঠন করি। দেশে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ডিজিটালাইজেশনে যেন কোন পার্থক্য সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলি। ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে স্পিড বৃদ্ধি করি। মূলত এসব কারণেই আইসিটি খাত দ্রুত সফলতার মুখ দেখেছে। টেলিকম সেক্টরে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে টেলিমিডিয়া ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবহারকারী ১২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ইন্টারনেটের অতিরিক্ত মূল্য প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ইন্টারনেটের মূল্য খুব একটা বেশি না, বরঞ্চ কমই আছে। আমরা এখন কোয়ালিটি সার্ভিসের দিকে নজর দিচ্ছি। ২০১৬ সালে আমরা সাব মেরিন কেবলে সংযুক্ত হচ্ছি, তখন আর এইসব সমস্যা থাকবে না। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, যাদের মাধ্যমে আমরা ২১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। আইসিটি খাতে বর্তমানে বাংলাদেশের আয় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, তবে আগামী চার বছরে তা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী আইসিটি খাতের বর্তমান কর্মকা- প্রসঙ্গে আরও বলেন, বর্তমানে আইসিটি বিষয়ক বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে এদেশে বিনোয়োগে উৎসাহী করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিকাশে আমাদের সর্বাত্মক মনোনিবেশ আছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রই এখন ডিজিটাল। বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে কাজ করছি। মূলত সরকার ও দেশের মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলেই দেশে এই উন্নয়নের জোয়ার।
×