ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ওরে ভাই ফাগুন এসেছে বনে বনে-

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ওরে ভাই ফাগুন এসেছে বনে বনে-

মনোয়ার হোসেন ॥ প্রকৃতি চলে তার আপন নিয়মে। সেই নিয়ম মেনেই শীতের কাতরতা ছাপিয়ে উষ্ণতার বার্তা নিয়ে এলো ঋতুরাজ বসন্ত। আর রাজনৈতিক অস্থিরতাকে উপেক্ষা করে উৎসবপ্রিয় বাঙালী তাতে শামিল হলো হৃদয়ের টানে। বোমাবাজের হামলার শঙ্কাকে উড়িয়ে শহরজুড়ে বয়ে গেল আনন্দের হিল্লোল। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, বক্তার কথায় কিংবা নৃত্যের মুদ্রায় ছিল সহিংসতার প্রতিবাদী উচ্চারণ। বসন্তের রঙ্গিলা আবহে অপমৃত্যুর মিছিল থেকে মুক্ত হয়ে ব্যক্ত হলো শান্তির পূণ্যভূমি গড়ার প্রত্যয়। বর্ণিল বসন্তের কাছে যেন ধূসর হলো শঙ্কা আর সহিসতা। শুক্রবার ছিল মনের অলিন্দে উত্তাপ ছড়ানো বসন্তের প্রথম দিন পয়লা ফাল্গুন। যান্ত্রিক শহর ঢাকায় এদিন বিরাজ করেছে নাগরিকের মন উতলা করা স্নিগ্ধ আবহ। অনেকেরই মনে মনে গুঞ্জরিত হয়েছে ‘ওরে ভাই ফাগুন এসেছে বনে বনে।’ শুধু বনে নয়, মানুষের মনেও লেগেছিল ফাগুনের ছোঁয়া। আর রূপময় এ ঋতু বরণে নিজের সুবিধামতো সময়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীবাসী। পোশাক ও মননে ছিল বসন্ত বরণের নয়নজুড়ানো দৃশ্য। বাসন্তী কিংবা হলুদ রঙের শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় বেলী ফুল অথবা মাথায় ফুলের টায়রা পরে ঘুরে বেড়িয়েছে নারীকুল। বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া জড়িয়েছে পুরুষের শরীরে। শিশুদের পোশাকেও ছিল রঙের সমাহার। সব মিলিয়ে মন আর প্রাণের মমতায় উচ্চারিত হয়েছে বসন্তের জয়গান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল বসন্ত বন্দনার নানা আয়োজন। আর সেসব আয়োজনে শামিল হয়ে নিজেদের প্রাণ প্রাচুর্যের প্রকাশ ঘটিয়েছেন শহরবাসী। মাতোয়ারা হয়েছেন বসন্ত উদ্্যাপনের অনাবিল আনন্দে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকাজুড়েই উদ্্যাপনের মাত্রাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজনটি বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। এখানে বসন্ত আবাহনের অনন্য আয়োজনটি করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। সকাল থেকে রাত অবধি নাচ-গান ও কবিতায় মুখরিত ছিল শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য এ আঙিনা। এর বাইরে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একুশের বইমেলায়। বসন্তের আনন্দ আবাহনের পাশাপাশি নতুন বইটি সংগ্রহের তাগিদে অনেকেই গিয়েছেন একুশে গ্রন্থমেলায়। বেড়েছে মেলার ঔজ্জ্বল্য। এর বাইরেও ঢাকাবাসীর অনেকেই কোনো আয়োজনে না গিয়েও বসন্তের উদাসী হাওয়া গায়ে মেখে ঘুরে বেড়িয়েছেন আপন খেয়ালে। ভোরের অলসতা কাটিয়ে রোদ ঝলমলে সকালের আলো তখন ছড়িয়ে পড়েছে বকুলতলায়। সবুজ পাতার ফাঁকগলে মিষ্টি রোদের কিরণে উদ্ভাসিত মঞ্চ। ভেসে এলো সারেঙ্গীর মোহময় সুর। যন্ত্রশিল্পী মতিয়ার রাগ বসন্ত বাহারের সুরেলা শব্দধ্বনিতে ঋতুরাজকে বরণকারীদের মনে ছড়িয়ে দিলেন ভাললাগার অনুরণন। এরপর মঞ্চে এলেন প্রিয়াংকা গোপ। বিলম্বিত মধ্য লয়ের আশ্রয়ে রাগ বাহারের মাধ্যমে জানালেন বসন্ত-বন্দনা।
×