ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওবামা, ক্যামেরনসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শোক

সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর ইন্তেকাল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আর নেই। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১টায় ৯০ বছর বয়সে একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। একই দিন সকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। সৌদি আরবের এই প্রয়াত বাদশাহর মৃত্যুর আসল কারণ জানানো হয়নি। গত ডিসেম্বর থেকে নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসের সমস্যাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। একই দিন বাদ আসর রিয়াদের ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর পরই তাঁকে আল ওদ সরকারী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর বাশার আল শরিফ, মিসরের প্রধানমন্ত্রীসহ আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠান সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়। ২০০৫ সাল থেকে তেলসমৃদ্ধ এবং মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন আবদুল্লাহ। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের কাতারেও তাঁর নাম ছিল। তবে নিজের অন্য ভাইদের তুলনায় অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন এই প্রয়াত বাদশাহ। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পরিবারের অনেক সদস্যদের অপব্যয় কমিয়ে আনেন তিনি। খবর দ্য খলিজ টাইমস, বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপির। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির প্রতি সমর্থনের কারণে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এদিকে আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর তাঁর সৎভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ দেশটির নয়া বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রথমবারের মতো টেলিভিশন ভাষণে ৭৯ বছর বয়সী সালমান বলেন, নতুন বাদশাহ হিসেবে তিনি তাঁর প্রয়াত ভাই আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের দেখানো পথ অনুসরণ করবেন। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য বজায় রাখতে কাজ করবেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেসব নীতি চলে আসছে, আমি তা থেকে বিচ্যুত হব না। বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল সিসি, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট হোসেন রুহানি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফসহ বিশ্ব নেতারা শোক জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে জর্ডান ও বাহরাইনে ৪০ দিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে দেশটির রাজপরিবারে আরও কয়েকটি পরিবর্তনের খবর দেয়া হয়েছে। দেশটির নয়া ক্রাউন প্রিন্স (ভবিষ্যত বাদশাহ) হয়েছেন মুকরিন বিন আবদুল আজিজ। আর তাঁর ডেপুটি হয়েছেন মোহাম্মাদ বিন নায়েফ। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ। ২০০৫ সালে ভাই বাদশাহ ফাহাদের স্থলাভিষিক্ত হন আবদুল্লাহ। রক্ষণশীল সৌদি আরবে বেশকিছু সংস্কারের জন্য সবার প্রশংসা কুড়ান তিনি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া। সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ দেশটির যুবরাজ, প্র্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং রিয়াদের গবর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ রিয়াদের গবর্নর থাকার সময় এই মরু শহরটিকে অনত্যম আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলেন। মৃদুভাষী এবং দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সৌদি আরবের নতুন বাদশাহর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৫। তিনি একজন মিডিয়া মুঘল হিসেবেও পরিচিত। সৌদি বাদশাহর মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শোক প্রকাশ করেন। তাঁকে একজন সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। শোকবার্তায় ওবামা বলেন, ‘একজন নেতা হিসেবে তিনি সর্বদা আন্তরিক এবং তাঁর বিশ্বাসকে তুলে ধরতে অত্যন্ত সাহসী ছিলেন।’ ওবামা বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে আমি সর্বদা বাদশাহর চিন্তা-চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং আমাদের প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে তিনি প্রশংসার পাত্র ছিলেন।’ ওবামা যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরবের সম্পর্কের গুরুত্বের ক্ষেত্রে আবদুল্লাহর দৃঢ়তা ও আবেগোদ্দীপ্ত বিশ্বাসের প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ একজন ‘প্রিয় বন্ধু ও অংশীদারের’ প্রশংসা করেন। একজন ‘বিচক্ষণ ও নির্ভরযোগ্য মিত্র’ হিসেবে তিনি তাঁকে তুলে ধরেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ বলেন, সৌদি জনগণের জন্য তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ হিসেবে সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
×