ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসাম্প্রদায়িকতা বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে শিশু সংগঠনকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

অসাম্প্রদায়িকতা বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে শিশু সংগঠনকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে শৈশব থেকেই শিশুদের পরিচর্যার মাধ্যমে বাঙালী সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এক্ষেত্রে কাজ করার জন্য শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দেশের বৃহত্তম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের দু’দিনব্যাপী ‘জাতীয় সম্মেলন-২০১৫’ উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। উদ্বোধনের পর প্রথম দিনের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাংগঠনিক অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তারা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়-রাষ্ট্র ও জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতিম-লীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া প্রমুখ। এর আগে, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আবদুল হামিদ। এ সময় শিশুরা জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ‘আমরা তো সৈনিক শান্তির সৈনিক-অক্ষয় উজ্জ্বল সূর্য/ খেলাঘর আমরা আমরা খেলাঘরসহ বিভিন্ন গান পরিবেশন করে। উদ্বোধন শেষে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক টিমের ১৫ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি। জানা যায়, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন সারাদেশের ৪০টি জেলা ও আঞ্চলিক কমিটি এবং প্রায় চার শতাধিক শাখা আসরের সহস্রাধিক প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক। এছাড়াও দুই সহস্রাধিক শিশু-কিশোর ভাই-বোনসহ অভিভাবক-শুভানুধ্যায়ী, পৃষ্ঠপোষক ও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরাও এতে অংশ নেন। অংশ নিয়েছেন সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘সব পেয়েছি’র আসরের ছয় জন সংগঠক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ বলতে তিনি সৎ, যোগ্য, চরিত্রবান ও মেধাবীদের বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখ-ে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। মূল্যবান এ ঐতিহ্যকে লালন করতে শিশু-কিশোরদের মাঝে শৈশব থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার বীজ বুনতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমাদের এ বয়সে আমরা ছিলাম পরাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের না ছিল কথা বলার স্বাধীনতা, না ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংস্কৃতি চর্চাও ছিল রীতিমতো কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তোমরা আজ তা থেকে মুক্ত। তোমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাই তোমাদের সামনে আজ অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত। তাদের তথ্য-প্রযুক্তিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে সারা বিশ্ব আজ হাতের নাগালে এসেছে। কম্পিউটারে একটা ক্লিকে বিশ্বের সব তথ্য মুহূর্তে তোমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। তোমরা তা থেকে সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। আমাদের সময় এ ছিল কল্পনাতীত, অবিশ্বাস্য। এ দিক থেকেও তোমরা সৌভাগ্যবান। শিশুদের প্রামে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা যারা আজ শহরে বড় হচ্ছো, তোমাদের অনেকেরই দাদা-নানার বাড়ি কিন্তু গ্রামে। ছুটি পেলে তোমরা অবশ্যই গ্রামে তাদের কাছে ছুটে যাবে। দেখবে তোমাদের পেয়ে তারা কত আনন্দিত হয়। খেলাঘর আসরের কার্যক্রমের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি, সুকুমারবৃত্তির চর্চা ও সৃজনশীল কর্মকা-ে তাদের সম্পৃক্ত করছে। পান্না কায়সার বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন, মৌলবাদ, দেশদ্রোহিতা, সন্ত্রাসী কর্মকা- একদিন খেলাঘরের শিশুরাই রুখে দেবে। সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারাই হবে যোগ্য উত্তরসূরী। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সামসুজ্জামান খান বলেন, একটি দেশের মানদ- নির্ভর করে সে দেশের শিশুরা কতটুকু ভাল কাজে পারদর্শী। আমাদের শিশুদের সৎপথে চলতে ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে খেলাঘর অসামান্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই শিশুরাই একদিন দেশকে আলোকিত করবে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সমাপনী অনুষ্ঠানে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতিপদক প্রদান করা হবে শিল্পী মুর্তজা বশিরকে।
×