ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অসম থেকে ডজনখানেক জঙ্গীর বাংলাদেশে গা-ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

অসম থেকে ডজনখানেক জঙ্গীর বাংলাদেশে গা-ঢাকা

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের নাগরিক; কে এই জেএমবির জঙ্গী নেতা, যিনি অসমে জঙ্গীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অসম জেএমবির জঙ্গীদের নেতৃত্বদানকারী এই বাংলাদেশী নাগরিকের নাম জানানো হয়েছে শাহনুর আলম ডাক্তার। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের একজন ও অপরজন অসমের বাসিন্দা; এই দুই জঙ্গী তার উপরের নেতা। এতদিন ধরে তদন্ত সংস্থা এনআইএ জানত, গ্রেফতারকৃত শাহনুর ডাক্তারই অসমে জঙ্গীদের মাথা। এখন শাহনুরের জবানবন্দীতেই জানা গেল, অসমে যারা জঙ্গীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহনুর তাদের দু’জনের নিচে। অর্থাৎ তিন নম্বরে। শীঘ্রই ওই দুই নেতার নাম ও ছবি প্রকাশ করে ইনাম ঘোষণা করবে এনআইএ। বাংলাদেশের নাগরিক অসমে জঙ্গীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই খবর পাওয়ার পর গোয়েন্দা মহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়। অসমের জঙ্গীদের নেতৃত্বদানকারী আরও ডজনখানেক জঙ্গী অসম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আত্মগোপন করেছে বলে ধারণা করছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তদন্তকারী গোয়েন্দাদের কাছে শাহনুর স্বীকার করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনার ছক তৈরি করেছিল জেএমবি। বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের মধ্যে যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে এবং জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের তালিকা বিনিময় হয়েছে তার বাইরে এই ধরনের উপরের স্তরের জঙ্গী নেতা যে রয়ে গেছে তা ছিল সবারই অজানা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণ তদন্তে নেমে শাহনুর ডাক্তারের নাম জানতে পারে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছিল, অসমে জেএমবির জঙ্গীদের মাথা শাহনুর ডাক্তারই। অথচ গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে শাহনুর জানান, আরও ৩ জঙ্গী নেতা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। জেএমবির গ্রেফতারকৃত মাথা শাহনুরকে জেরা করে এমন তথ্য মিলেছে বলেই দাবি অসম পুলিশ ও তদন্ত কর্তৃপক্ষের। এবার অসম থেকে গা-ঢাকা দেয়া ডজনখানেক জঙ্গীর খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। জেএমবির জঙ্গীদের সঙ্গে উলফার কোন ধরনের যোগসূত্র আছে কিনা তাও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গী ঘাঁটি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে একদল জঙ্গী। এদেরই একটা অংশ আবার অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অসমে। এদের খোঁজ চলছে। শুধু তাই নয়, জিহাদী মতাদর্শ যারা প্রচার চালাচ্ছে তাদেরও ধরতে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অসম পুলিশের ডিজি খগেন শর্মা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, জেএমবির জঙ্গীজাল দক্ষিণ ভারতেও বিস্তৃত। ডাক্তার শাহনুর স্বীকার করেছে, জেএমবির জঙ্গীচক্রটি শুধুই পশ্চিমবঙ্গ বা অসমে নয়, তারা কেরালা ও কর্ণাটকেও তৎপর। এসব রাজ্যে তৎপর এমন কয়েক জঙ্গীর নামও বলেছে শাহনুর ডাক্তার। শাহনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়মিত অসমে আসত ওসব জঙ্গী এবং তার পরেই অসমে ঘটানো হতো বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) কাছে অসম পুলিশ শাহনুরের কাছ থেকে পাওয়া জঙ্গীদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট সব রাজ্যের পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে। গোয়েন্দারা শাহনুরকে জেরা করে যেসব তথ্য পেয়েছে, তা যাচাই করে আরও গভীরে তদন্তের জন্য দিল্লী ও কলকাতা থেকে তদন্ত সংস্থা এনআইএ ও আইবির অফিসাররা গেছেন গুয়াহাটিতে। শাহনুরকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তারা জেরা করবেন। এনআইএ তদন্তে প্রথমে পায়, বাংলাদেশ থেকে আসা টাকা পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গীদের বিভিন্ন ডেরা ও প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌঁছে দিত শাহনুর। পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গীদের তহবিলের বিষয়টি মূলত শাহনুরই দেখাশোনা করত। শাহনুর ডাক্তারকে ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে অসম পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘বৃহত্তর ইসলামিক বাংলাদেশ’ গড়ার ষড়যন্ত্র করছিল জেএমবিÑএই তথ্য দিয়েছে শাহনুর ডাক্তার। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এনআইএ ও আইবি। আদালত শাহনুরকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলে এনআইএ তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত শাকিল ও তার স্ত্রী রাজিয়া বিবির মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে জিহাদী জঙ্গীচক্রের সঙ্গে চেন্নাইসহ দক্ষিণ ভারতের যোগ থাকার প্রমাণ। এই তথ্যের ভিত্তিতেই গত ১৭ নবেম্বর এনআইএ হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করে মিয়ানমারের নাগরিক ও এই জঙ্গীচক্রেরই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ খালিদ মহম্মদকে। ভারতে জঙ্গী মডিউলগুলোকে বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতেই তাকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে পাঠানো হয়েছিল হায়দরাবাদে। আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গী খালিদের যোগ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসমে গ্রেফতারকৃত শাহনুর আলম ডাক্তারও এই জঙ্গীচক্রের হোতাদেরই অন্যতম একজন বলে মনে করছে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
×