ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক পাকি দণ্ডিত লক্ষ পাকি বর্তমান

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

এক পাকি দণ্ডিত লক্ষ পাকি বর্তমান

মুনতাসীর মামুন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বাধীন আলবদরের সদস্যরা আমার শিক্ষকদের ধরে নিয়ে যায়। বিজয়ের পর তাঁদের ক্ষত বিক্ষত লাশ পাওয়া যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি এবং মিরপুরের আশপাশে। সেই থেকে আমরা দিন গুনছি কবে আমাদের শিক্ষক হত্যার বিচার হবে। শেখ হাসিনার কারণে ২০১০ সালে বিচার শুরু হয়েছিল। নানা বিপত্তি পেরিয়ে বিচার এগুচ্ছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় আলবদরদের দ- দেয়া হয়েছে, একজন আলবদরের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। আজ পালের গোদা মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের মাধ্যমে আমার শিক্ষকদের হত্যার বিচার শুরু হলো। নিজামী যা করেছে সর্বোচ্চ দ-ও তার জন্য মৃদু। নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডেমরা ও বাউশগাড়ি গ্রামে প্রায় ৪৫০ জনকে হত্যার নির্দেশ। আলপাড়া ও ভূতেরগাড়ি গ্রামে ১৯ জন, ধুলাউরা গ্রামে ৩০ জনকে হত্যা। এ ছাড়া, খুচরো কয়েকজনের হত্যার ব্যাপারও আছে। তবে, মূল বিষয় হচ্ছে, তার নির্দেশে আলবদর বাহিনী সারা দেশে গণহত্যা বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিচালনা করে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে তার নৃশংসতা তুলনাহীন। একটি উদাহরণ দিই, আমি ৪০ বছর শিক্ষকতা করছি। অন্য সব শিক্ষকের মতো আমার দ্বারও সব বর্ণের, ধর্মের ছাত্রদের জন্য খোলা। আমি বিশেষ আদর্শের সমর্থক এটাও গোপনীয় কিছু নয়। এবং এই তীব্র মেরুকরণের সময়ও ভিন্নধর্মী কোন ছাত্র আমার সঙ্গে অশিষ্ট আচরণ করেনি এবং আমিও করিনি। কারণ, পরস্পরের মধ্যে এই বিশ্বাস আছে যে আমরা জান থাকতে কেউ কারও ক্ষতি করব না, কিন্তু ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আলবদর সদস্যরা ছাত্র সেজে এসে [আসল ছাত্র ছিল অনেক] শিক্ষকদের নিরাপদে আশ্রয়ে নেয়ার নামে সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং রায়েরবাজারে বা মিরপুরে নিয়ে হত্যা করে। অর্থাৎ নিজামী এমন এক বাহিনী তৈরি করেছিলেন, সেই ৪০ বছর আগে যাদের হৃদয় কেটে রোবোটিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেদিক থেকে নিজামী বিজ্ঞানীর আসনও দাবি করতে পারেন। আলবদরদের সম্পর্কে আমরা সবচেয়ে কম জানি। এমনকি নিজামী সম্পর্কেও। দৈনিক সংগ্রাম, শাহরিয়ারের ডকুমেন্টারি আর সাঁথিয়ার মানুষজনের সাহস না থাকলে ১৯৭১ সালের সবচেয়ে বড় অপরাধী নিজামী লোকচক্ষুর অগোচরেই থেকে যেতেন। এবং মুজাহিদের মতো অনেকেই তাকে ‘ওলি’ হিসেবে মেনে নিতেন। ১৯৭২ সাল থেকে আলবদর সদস্যরা নিজেদের সম্পর্কে তথ্য শ্ঙ্খৃলার সঙ্গে বিনষ্ট করেছে। এদের একটা অংশ যারা সাধারণ সদস্য ছিল, ১৭ ডিসেম্বর তারা সাধারণের ভিড়ে মিশে গেছে। অন্য এলাকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। কিছু আলবদর বিদেশ চলে গেছে। এসব আলবদরই পরে জামায়াতে ইসলামীর ভিত্তি গড়ে তোলে ১৯৭৫ সালের পর। এ বাহিনীর হিংস্রতা ছিল তুলনারহিত। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ রূপান্তরিত হয়েছিল আলবদর বাহিনীতে, তাদের সঙ্গে ছিল কিছু অবাঙালী ও স্বাধীনতাবিরোধী অন্য দলের যুবকরা। পাকিস্তানী বাহিনীর অধীনে ছিল এরা। অপারেশন চালাবার সময় পাকিস্তানী কমান্ডারের আদেশ তাদের মানতে হতো কিন্তু মূলত স্বশাসিত বাহিনী হিসেবেই এরা কাজ করেছে। আজকে যাদের বিচার হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের সিংহভাগ ১৯৭১ সালে ছিল আলবদর কমান্ডার। আলবদর বাহিনী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করলেও তাদের নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ছিল বাঙালী পেশাজীবীদের হত্যা। পাকিস্তানী বাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যার অংশ ছিল তা। ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহ তাদের এই হত্যাকা- তুঙ্গে ওঠে। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি, মুখে মুখোশ বা রুমাল বাঁধাÑ এই ছিল তাদের ইউনিফর্ম। মাইক্রোবাস, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জীপ ও তৎকালীন ইপিআরটিসির বাস নিয়ে তারা প্রতি রাতে বেরিয়ে পড়ত নিজামী বা মুজাহিদের নির্দেশে। যাদের ধরে নেয়া হতো তাদের প্রধানত রায়েরবাজার ও মিরপুর নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করে আশপাশের জলায় ফেলে দেয়া হতো। একজন বিদেশী সাংবাদিক ১৬ ডিসেম্বর রায়েরবাজারের জলাভূমিতে শত শত মৃতদেহ দেখে মন্তব্য করেছিলেনÑ“ওঃং হড়ঃ ড়হষু ঁঃঃবৎষু ংযড়পশরহম নঁঃ বি ধৎব ধংযধসবফ ঃযধঃ বি নবষড়হম ঃড় যঁসধহ ৎধপব যিরপয রং পধঢ়ধনষব ড়ভ ফড়রহম ঃযরং.” তৎকালীন সংবাদপত্রগুলোতে লেখা হয়েছিল, এদের ক্ষেত্রে যেন জেনেভা কনভেশন প্রয়োগ করা না হয়। এরা মানুষ নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার পর একটি যথার্থ কাজ করেছিলেন তা হলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন। জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্রসংঘ শুধু ধর্মভিত্তিক দল ছিল না, এ দু’টি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের খুনী-ধর্ষকদের দল। ১৯৭২ সালে সংবাদপত্রগুলো আর কোন শব্দ তাৎক্ষণিকভাবে না পেয়ে এদের ফ্যাসিস্ট হিসেবে সব সময় উল্লেখ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকলে আজ আর অবস্থা ১৯৭১ সালের মতো হতো না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা লে. জে. জিয়াউর রহমান আলবদর বা জামায়াতীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। শুধু তাই নয়, যে সব আলবদর, জামায়াতী জেলে ছিল তাদেরও মুক্তি দেন। এভাবে বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আলবদর বন্ধু হিসেবে। কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে, কতটা বিকৃত রুচির হলে, কতটা ক্ষমতালোভী হলে এ ধরনের কাজ করা যায় তা অনুমেয়। আলবদর বন্ধুর সহায়তা পেয়ে বড় আলবদর যেমন নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান প্রভৃতি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরতে থাকে এবং আবার জামায়াতে ইসলামীর ভিত্তি স্থাপন করেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের নাম বদল করে ইসলামী ছাত্র শিবির রাখা হয়। কেননা ছাত্রসংঘ তো আলবদরে রূপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই মোটামুটি রাজনৈতিকসচেতন ব্যক্তিরা বুঝতে পারছিলেন দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে জামায়াতে আলোচনা শুরু হয় এবং করণীয় ঠিক করে জামায়াত নয়, বরং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলাম জামায়াত ই তুলাবা, এখানে যা পরিচিত ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ নামে। সৈয়দ ভালি রেজা নসর পাকিস্তানের ধর্মীয় দলগুলো নিয়ে গবেষণা করে একটি বই লিখেছেন, নাম-দি ভ্যানগার্ড অব দি ইসলামিক রিভ্যুলেশন? দি জামায়াত ই ইসলামী অব পাকিস্তান। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস বইটি প্রকাশ করে ১৯৯৪ সালে। নসর লিখেছেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ পাকিস্তানের কোন অংশেই তাদের কোন স্থান ছিল না। সরকারী সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানে তারা পিপিপির বিরুদ্ধে এবং পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিল। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জামায়াত দেখল জাতীয় রাজনীতিতে স্থান করে নিতে হলে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করাই উত্তম। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছিল ইসলামী জমিয়ত তুলাবা মে মাসে যখন তারা সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতে লাগল। অন্যকথায় বলা যেতে পারে, পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিকভাবে নিজের জায়গা করে নেয়ার জন্য জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমরা দেখি- মুক্তিযোদ্ধাদের ঠেকাতে যে সব সংস্থা গড়ে উঠেছিল, যেমন রাজাকার, শান্তি কমিটি বা আলবদরÑ সবখানে সর্বতোভাবে যোগ দিয়েছিল জামায়াত ও ছাত্রসংঘের কর্মীরা। অবশ্য, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ সবসময়ই ছিল। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম প্রকাশ করার অর্থ দিয়েছিল আইএসআই। বাংলাদেশ হওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান প্রথম সেনাবাহিনীর পাকিস্তানীকরণ শুরু করেন, যা পরে এগিয়ে নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাকিস্তানের পলিসি সুচারুরূপে সব পর্যায়ে প্রয়োগের জন্য জেনারেল জিয়াউল হক খুশি হয়ে তাকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ প্রদান করেছিলেন। জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ২৬ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট কার্যকর করা হয় এবং রংপুরে এরশাদ এই অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানীকরণের কারণেই জিয়াউর রহমান জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং রাজাকারদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। একই পলিসি অনুসরণ করেন এরশাদ। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া তাদের ক্ষমতার অংশীদার করেন, যা পাকিস্তানেও সম্ভব হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শুরু থেকেই জামায়াত প্রধানত সামরিক বাহিনীর সহায়তায় শক্তি সঞ্চয় করেছে। একটি বিষয় খেয়াল করবেনÑ বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ ও সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাসীদের গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে, জামায়াতীদের নয়। নসরের বক্তব্যের সমর্থন পাই মনসুরের ‘আলবদর’ গ্রন্থেও। তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনার জন্য প্রাদেশিক মজলিসে শূরা ও জেলা নাজেমদের এক বৈঠক আহ্বান করা হয়। সামগ্রিক আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তিনটি বিকল্প খোলা আছেÑ ১। ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ যা করছে তা সমর্থন ২। যা হবার হোক, নিজেদের সরিয়ে রাখা ৩। পরিস্থিতিকে ঘুরিয়ে দেয়া যাতে পাকিস্তানের অখ-তা অক্ষুণœ থাকে এবং এ কারণে নিজের দায়িত্ব পালন করা। এই সভায় প্রাদেশিক শূরার রোকন মুস্তাফা শওকত ইমরান এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন, যার মূল কথা হলোÑ পাকিস্তানের এই অংশকে ‘হেফাজত’ করতে হবে যেভাবে মসজিদ ‘হেফাজত’ করা হয়। একজনও ‘বিচ্ছিন্নতা’বাদীদের সমর্থন করেনি। চার দিন এই বৈঠক হয়। ঐকমত্যের যে সিদ্ধান্তটি হয় তা হলোÑ এখানকার জনগণ দুটি শক্তির মাঝখানে পড়ে পিষ্ট হচ্ছে। একদিকে হচ্ছে ‘দুশমন’ (অর্থাৎ ভারত) নিয়োজিত হিন্দু ও কমিউনিস্ট যারা দেশকে টুকরো টুকরো করে হিন্দুস্তানের হাতে তুলে দিতে চায়। অন্যদিকে, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে এদের মতবাদে বিশ্বাসী লোকজন। সুতরাং কী করতে হবে? এই দু’পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হবে। ‘আমরা একদিকে ইসলামী শক্তি নিয়ে দুশমনের সঙ্গে ময়দানে সংঘাতে অবতীর্ণ হব, অন্যদিকে ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে তার সংশোধনের জন্য আমাদের মতো করে চেষ্টা করব।’ এরপর ১৯৭১ সালের ১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে ছাত্রসংঘের কর্মীদের এক বৈঠক হয়। সেখানে ঢাকা জামায়াতের নাজেম শাহ জালাল চৌধুরী তাদের নীতি ঘোষণা করেন। সিদ্ধান্ত হয়, কোন সার্কুলার জারি করা যাবে না, কারণ ‘তা হবে মৃত্যুকে আহ্বান করার শামিল।’ এ সিদ্ধান্তটি উল্লেখযোগ্য। জামায়াত যে পাকিস্তানী বাহিনীর অন্তর্গত হয়ে কাজ করছিল বা বিভিন্ন বাহিনী তৈরি করেছিল সে সম্পর্কে কাগজে কলমে খুব কম প্রমাণ রেখেছে। এ বিষয়ে তারা খুব সতর্ক ছিল। তাদের কার্যকলাপের প্রধান প্রমাণ তাই তাদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রাদেশিক শূরার চারজন সদস্য সারা ‘পূর্ব পাকিস্তান সফর’ করে তাদের কর্মসূচী কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেবেন। ১৫ ও ১৬ মার্চ চারজন সফর শুরু করলেন। কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানালেন। খালেদ লিখেছেনÑ ‘এই সফরে কর্মী সমাবেশে ফি আমানিল্লাহ বলা হতো। আল্লাহর দরবারে আহাজারি করে ইসলাম ও পাকিস্তানের অক্ষুণœতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করা হতো। দোয়া নিয়ে সাথীরা পরস্পরের নিকট থেকে এমনভাবে বিদায় নিত যেন আর কখনও এই দুনিয়ায় পরস্পরের দেখা হবে না।’ ছাত্রসংঘ তৃতীয় বিকল্প বেছে নিয়েছিল অর্থাৎ হিন্দুস্তানের অনুচরদের থেকে পাকিস্তান রক্ষা এবং পাকিস্তান রক্ষার জন্য কর্তব্য হচ্ছে পাকিস্তানী শাসক অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং সর্বত্র প্রচার করা যে পাকিস্তানকে হেফাজত করাই মূল কাজ। এ কারণেই, গণহত্য শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে জামায়াতের আমির গোলাম আযম সদলে টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং জামায়াত/সংঘ কর্মীরা শান্তি কমিটি, রাজকার বাহিনী, আলবদর ও আলশামসে দলে দলে যোগদান করে। এটি ছিল প্রকাশ্য দিক। অপ্রকাশ্য নীতি ছিল অন্য। তারা ধরে নিয়েছিল সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগ ও বামধারার দলগুলোকে দমন করে ফেলবে। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দেবে। পাকিস্তানপন্থী দলগুলো তখন সুযোগ পাবে সেই শূন্যতা ভরাট করার। সেনাবাহিনী যদি জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে জামায়াত হয়ে উঠবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজা হয়ে যাবে তারা।
×