ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

১৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ১০০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ!

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কক্সবাজার 

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৯ জুলাই ২০২৫

১৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ১০০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ!

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন এখন ‘মৃত্যুকূপ’। সঙ্কীর্ণ রাস্তা, তীব্র বাঁক, অদক্ষ চালক ও প্রয়োজনীয় সাইনবোর্ডের অভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। আতঙ্কে দিন কাটছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের। শুধু লোহাগাড়ার চুনতির জাঙ্গালিয়া পয়েন্টেই গত ছয় মাসে প্রাণ গেছে অন্তত ২৯ জনের, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পুরো মহাসড়কজুড়ে গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৩০ জন। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন শতাধিক।

এমন বাস্তবতায় স্থানীয়দের একটাই দাবি—এই সড়ক দ্রুত সংস্কার, প্রশস্তকরণ ও চালকদের দক্ষতা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ। তা না হলে মহাসড়ক হয়ে থাকবে এক ‘নীরব কবরস্থান’।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপ্রিয় এ রুটটি প্রতিদিন বহন করে লক্ষাধিক টন লবণ, মাছসহ নানা মালবাহী ভারী যানবাহন। এই গাড়িগুলোর ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। ফল—একটার পর একটা দুর্ঘটনা।

শুধু গত এপ্রিলে তিন দিনের ব্যবধানে ঘটেছে তিনটি বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ গেছে ১৫ জনের। সর্বশেষ ২৪ জুলাই লোহাগাড়ার পদুয়া এলাকায় ট্রাকচাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ১৫৫ কিলোমিটারের মহাসড়কের অন্তত ১০০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সাতকানিয়া, কেরানিহাট, হাজিরাস্তা, বনপুকুর ও জাঙ্গালিয়া এলাকাগুলোতে দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার আহ্বায়ক মোজহিদ হোসাইন সাগর বলেন, ‘সাতকানিয়া থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত অংশটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সরু সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়িই মূল সমস্যা।’

স্থানীয় বাসচালক নুরুল আবসার বলেন, ‘এই সড়কে সবচেয়ে বেশি বাঁক। আর দূরপাল্লার চালকরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান। একটার পর একটা প্রাণ চলে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, ‘কিছু এলাকায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে, সাইনবোর্ডও বসানো হয়েছে। কিন্তু চালকদের অসচেতনতা কমছে না। মহাসড়কটি পরিকল্পনাহীনভাবে নির্মিত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কার দরকার।’

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘চালকদের গাফিলতি, ঘুম ও বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার মূল কারণ। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি। কিন্তু চালকেরা দায়িত্বশীল না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো কঠিন।’
 

নোভা

আরো পড়ুন  

×