ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সাটুরিয়ায় ঘাস চাষে সাফল্য, বছরে ৪০ লাখ টাকা আয় করছেন কলেজ ছাত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২২, ২২ জুলাই ২০২৫

সাটুরিয়ায় ঘাস চাষে সাফল্য, বছরে ৪০ লাখ টাকা আয় করছেন কলেজ ছাত্র

ছবি: জনকণ্ঠ

কৃষিকে ঘিরেই জীবনের স্বপ্ন গড়ছেন মানিকগঞ্জের এক কলেজ ছাত্র। আধুনিক ও বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাটুরিয়া উপজেলার কৈট্টা গ্রামের রুবেল হোসেন। মাত্র এক বিঘা জমি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তিনি বছরে আয় করছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা।

রুবেল মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ঘাসের একটি সফল খামার। প্রথমে নিজ গরুর খামারের খাদ্য চাহিদা মেটাতে ঘাস চাষ শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি রূপ নেয় একটি লাভজনক ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি স্মার্ট নেপিয়ার, গুয়াতেমালা, জাঞ্জিবার, পাকচং এবং তাইওয়ান হাইব্রিড জাতের ঘাস চাষ করছেন প্রায় ২০ বিঘা জমিতে।

রুবেল জানান, প্রতিটি বিঘা জমিতে বছরে ঘাস চাষে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। তবে এক বিঘা জমি থেকে বছরে ছয়বার ঘাস কাটা যায় এবং প্রতিবার গড়ে ১০ মেট্রিক টন ঘাস পাওয়া যায়। বাজারে এক মেট্রিক টন ঘাসের মূল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। ফলে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়। এই হিসেবে তার ২০ বিঘা জমির বার্ষিক আয় দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা।

রুবেলের এই সফলতা স্থানীয় কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করেছে। নয়াডিঙ্গী গ্রামের কৃষক আনসার আলী বলেন, “রুবেলের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষ শুরু করেছি। ভালো ফল পেলে চাষ আরও বাড়াব।” একই গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, “তিনি দেড় বিঘা জমিতে নেপিয়ার ও গুয়াতেমালা জাতের ঘাস চাষের পরিকল্পনা করছেন।”

স্থানীয় কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, “ধান চাষে এখন তেমন লাভ নেই। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ঘাস চাষ শুরু করেছি।” কলেজ ছাত্র আলমগীর হোসেন বলেন, “রুবেল ভাইয়ের সফলতা দেখে আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘাস চাষে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জমিও ঠিক হয়ে গেছে।”

রুবেল হোসেন জানান, “আমি ঘাস চাষকে আরও সম্প্রসারণ করতে চাই। নতুন জমি খুঁজছি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।”

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “রুবেল একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। তার মতো শিক্ষিত যুবকেরা কৃষিতে যুক্ত হলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক হবে। আমরা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি। প্রয়োজনে নতুন প্রশিক্ষণ ব্যাচ চালু করবো।”

এক সময় যেখানে চাকরির জন্য তরুণেরা হাহাকার করে, সেখানে রুবেলের মতো একজন কলেজ ছাত্র প্রমাণ করে দিচ্ছেন সাফল্য শুধুই অফিসের ডেস্কে সীমাবদ্ধ নয়। পরিকল্পনা, পরিশ্রম আর ধৈর্য থাকলে কৃষিকাজ দিয়েও গড়া সম্ভব স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। তিনি এখন শুধু একজন সফল চাষি নন, বরং এলাকায় অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

মুমু ২

×