ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরাজদিখানে আখ মৌসুম জমজমাট

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১৮ জুলাই ২০২৫

সিরাজদিখানে আখ মৌসুম জমজমাট

ছবি: জনকণ্ঠ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মৌসুমের শুরুতেই হাটে-বাজারে উঠতে শুরু করেছে তাজা আখ। বাজারে সদ্য ওঠা এই মৌসুমি ফল দেখতে যেমন টসটসে, স্বাদে তেমনি কিছুটা কাঁচা হলেও আগ্রহে কোনো ঘাটতি নেই ক্রেতাদের মাঝে। শহরের বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের ছোট ছোট হাটেও দেখা যাচ্ছে আখ বিক্রির দৃশ্য। তবে দাম নিয়ে একটু হকচকিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।

সিরাজদিখান বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিএনজি স্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে আছেন একাধিক খুচরা বিক্রেতা। তারা প্রতিটি আখ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

বিক্রেতাদের মধ্যে বাহেরঘাটা থেকে আসা শেখ আসলাম বলেন, “এই মুহূর্তে বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে দাম একটু চড়া। কিন্তু ১০–১৫ দিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে।”

ক্রেতারা অবশ্য দামের এই হঠাৎ ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয় গৃহিণী মৌসুমি আক্তার বলেন, “গত বছর এই সময় ১০–১৫ টাকায় যে আখ কিনেছি, এবার সেটা ৩০ টাকা! দাম দ্বিগুণ হলেও তদারকি নেই বলেই বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন।”

তবে ভিন্ন মত পোষণ করেন আরেক ক্রেতা নোওয়াব আলী। তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েদের খাওয়ানোর জন্য কিনে নিলাম। এখনো খুব একটা মিষ্টি না হলেও মৌসুমি জিনিসের স্বাদটাই আলাদা।”

শুধু বাজারেই নয়, মাঠেও জমে উঠেছে চাষাবাদের কাজ। শুক্রবার সকালে সিরাজদিখানের বাহেরঘাটা, কোলা, ইছাপুরা, রশুনিয়া, শেখরনগর, মধ্যপাড়া, মালখানগর ও জৈনসার ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা নিড়ানি দিচ্ছেন, আগাছা তুলছেন, আবার কেউ কেউ পানি দিচ্ছেন জমিতে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সিরাজদিখানে আখের আবাদ হয়েছিল ১৮২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩ হেক্টরে। খুব বড়সড় পরিবর্তন না হলেও, প্রবণতা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, “গত বছরের ভালো ফলন এবং বাজারমূল্য কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহী করে তুলেছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, যাতে আখ চাষ সম্প্রসারিত হয়।”

চাষিরাও এখন আগাম বিক্রির চিন্তায় ব্যস্ত। কৃষক তাহের আলী বলেন, “এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে আখ করেছি। গাছের বৃদ্ধি ভালো, আশা করি দামও ভালো পাবো।”

অন্য এক কৃষক জানান, “গাছগুলো মোটা হয়েছে, মিষ্টতাও বেশ ভালো। আর কিছুদিন গেলে বাজারে তুলে দেব। এভাবে মৌসুমের শুরুতেই কিছুটা অর্থ হাতে আসবে।”

তবে কিছু কৃষকের শঙ্কাও আছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে রোগবালাই। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, “আমরা নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছি। কোথাও রোগ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছি। আখ লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরাও আগ্রহী।”

সিরাজদিখানের কৃষকরা শুধু ফসল ফলিয়ে থেমে থাকতে চান না। তাদের আশা আখভিত্তিক শিল্প স্থাপিত হলে এলাকায় তৈরি হবে কর্মসংস্থান, আখের সঠিক মূল্যও নিশ্চিত হবে।

স্থানীয় কৃষকদের একাংশ মনে করেন, সরকারিভাবে একটি নির্ভরযোগ্য বিপণন কাঠামো তৈরি করা গেলে কিংবা ছোট পরিসরে হলেও আখ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা (যেমন গুঁড় বা আখের রস সংরক্ষণের ইউনিট) স্থাপন করা গেলে তারা আরও উৎসাহিত হবেন।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারে মনিটরিং বাড়লে, সিরাজদিখানে আখের উৎপাদন ও বিক্রয় দুটোই হবে সন্তোষজনক এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আখের খেতে যেমন এখন সবুজের ছোঁয়া, তেমনি বাজারেও ফিরে এসেছে মৌসুমি প্রাণচাঞ্চল্য। দাম চড়া হলেও কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের মাঝেই রয়েছে এক ধরনের আশাবাদ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সিরাজদিখান ভবিষ্যতে আখ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×