
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
বরগুনার আমতলী থেকে তালতলী পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক সড়কটির অধিকাংশ অংশ বর্তমানে খানাখন্দে ভরা। অসংখ্য ডোবা, গর্ত এবং ভাঙাচোরা অবস্থার কারণে সড়কটি এখন চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং পণ্যবাহী যানবাহনের যাত্রী-চালকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক সংলগ্ন আমতলীর মানিকঝুড়ি থেকে তালতলী উপজেলার ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কিলোমিটারের এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। ঢাকা থেকে সরাসরি চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালবাহী গাড়িগুলোর চলাচলের প্রধান ভরসাও এই সড়কটি। পাশাপাশি 'ডিসি পয়েন্ট' ডিসি পয়েন্ট, 'শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত', 'নিদ্রারচর সমুদ্রসৈকত' ও 'সোনাকাটা ইকোপার্ক'-এর মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্পটেও যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাও এটি। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় পর্যটকদের আগমন কমে যাচ্ছে, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও হ্রাস পাচ্ছে। যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কড়ইবাড়িয়া বাজার থেকে শনুরবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার সড়কে দুই তিন ফুট পরপরই বড় বড় গর্ত ও ডোবা রয়েছে। বর্ষাকালে এসব স্থানে পানি ও কাদা জমে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটু বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, ফলে চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। একইভাবে তালতলীর ব্রিজঘাট থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত ১২.৫ কিলোমিটার অংশের অবস্থাও ভয়াবহ। ইট-পাথর উঠে গিয়ে নিচের মাটি বেরিয়ে এসেছে। এতে যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা, ভ্যান ও ট্রাক প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রুবায়েত হোসেন বলেন, "তালতলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের খুব টানে। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে আসতে গিয়ে ভয় লাগে—জীবন যেন হাতে করে আনতে হয়। আগের মতো এখন আর বন্ধুরা এখানে আসতে চায় না।"
তালতলীর কলেজছাত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, "প্রতিদিন কলেজে যেতে মাহিন্দ্রা ব্যবহার করি, কিন্তু সড়কের খানাখন্দে এমনভাবে ঝাঁকি খেতে হয় যে কোমরে ব্যথা ধরে যায়। কতবার বলেছি, কেউ শোনে না।"
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, “রাস্তাটির অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন স্কুলে যেতে কষ্ট পাচ্ছি। ছাত্রছাত্রীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
পর্যটক মাহবুবুর রহমান বলেন, “ডিসি পয়েন্ট, শুভসন্ধ্যা ও সোনাকাটা ইকোপার্কে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু রাস্তা এতটাই খারাপ যে গাড়ি প্রায় চলেই না। এমন থাকলে কেউ আর এখানে আসতে চাইবে না।”
গাড়িচালক শহিদুল আসলাম বলেন, “কানুরবাজার থেকে কড়ইবাড়িয়া যাওয়ার সময় প্রায় প্রতিদিনই গাড়ি বিকল হয়। যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছানো দায় হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে তো গাড়ি চলেই না।”
তালতলী বাজারের ব্যবসায়ী মহরাজ বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে মালামাল আনতে গিয়ে সময় দ্বিগুণ লাগে, খরচও বেড়ে গেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হবে।”
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষক ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, “এই সড়কটি শুধু দুই উপজেলার সংযোগ নয়, বরং আমতলী ও তালতলীর অর্থনীতির লাইফলাইন। দ্রুত সংস্কার না হলে ক্ষতি হবে জনগণের পাশাপাশি সরকারেরও।”
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমতলী-তালতলী সড়কটি ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছিল। পরবর্তী উন্নয়ন কাজ ২০২৭-২৮ অর্থবছরের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আপাতত কিছু মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।”
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, “আমরা জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি খুব ভালোভাবেই জানি এবং বিষয়টি এলজিইডির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আপাতত জরুরি কিছু মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি যেন পরবর্তী প্রকল্প অনুমোদন ত্বরান্বিত হয়। এই সড়কটি শুধুই যোগাযোগ নয়, পর্যটন ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
নোভা