ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বেলাবতে বীজ সংকট:

বিএডিসির ধান না পেয়ে চড়ামূল্যে কোম্পানির ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছে চাষিরা

রুমেল আফ্রাদ রুবেল, বেলাব, নরসিংদী

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ১০ জুলাই ২০২৫

বিএডিসির ধান না পেয়ে চড়ামূল্যে কোম্পানির ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছে চাষিরা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে বীজধানের সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন)-এর বীজ পর্যাপ্তভাবে না পাওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি কোম্পানির ধানবীজ চড়া দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। বেলাবতে এ বছর ৫,৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সে অনুযায়ী এ বছর উপজেলায় আমন ধানের বীজের চাহিদা ১৫৬ মেট্রিক টন হলেও সরকারি বীজ পাওয়া গেছে মাত্র ২৮ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও কৃষি উপকরণ বিক্রির দোকানে সরকারি বীজের সংকট বেশ স্পষ্ট। বেলাবতে বিএডিসির ১৪ জন ডিলার রয়েছে। এর মধ্যে সদরের ডিলার বাচ্ছু মিয়া বলেন, “আমরা প্রত্যেক ডিলার মাত্র ২ টন করে বিএডিসির ধান পেয়েছি, অথচ চাহিদা ছিল প্রায় ৪০ টনের মতো। বিএডিসির বীজ না পেয়ে এখন বাধ্য হয়ে আমাদের কোম্পানির বীজ বিক্রি করতে হচ্ছে।” যেখানে বিএডিসির এক কেজি ধানবীজের দাম ৬০ থেকে ৬৭ টাকার মধ্যে, সেখানে বেসরকারি কোম্পানির ধানবীজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এতে করে চাষাবাদের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কোম্পানির বীজে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কম থাকার অভিযোগ রয়েছে অনেকের।

স্থানীয় কৃষক মো. লাল মিয়া বলেন, “সরকারি বীজের জন্য ডিলারদের কাছে বারবার ঘুরেও বীজ পাইনি। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে বেশি দামে কোম্পানির বীজ কিনেছি। এতে খরচ বাড়ছে, লাভ তো দূরের কথা—লোকসানের আশঙ্কা করছি।”

একই কথা বলেন চাষি হাফিজ উদ্দিন। তিনি জানান, “বিএডিসির বীজ মানসম্মত এবং উৎপাদনেও ভালো হয়। কিন্তু সময়মতো না পাওয়ায় কম দামে ভালো বীজ পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাব উপজেলা কৃষি অফিসার মুহিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, “বীজ সরবরাহের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ কিছুটা কম ছিল। পাশাপাশি আধুনিক ভিত্তি বীজের কিছু কিছু জাতের সরবরাহ থাকলেও এগুলোর ওপর কৃষকের আস্থা কম, তাই তারা নিচ্ছেন না। আমরা চেষ্টা করছি কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “বেসরকারি কোম্পানির কিছু বীজও ভালো মানের হয়, তবে কৃষকদের পরামর্শ ছাড়া যেন কেউ আমন ধানের বীজ না কেনেন, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে বলছি।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি বীজের সংকটকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বেসরকারি বীজ বিক্রি করে কৃষকদের ঠকাচ্ছে।

বেলাব উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। সময়মতো বীজ না পেলে কৃষিকাজে বিলম্ব ও উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

সানজানা

×