
ছবি: জনকণ্ঠ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর মন্ডলপাড়ার একমাত্র ভরসা এখন যেন মৃত্যুফাঁদ। ঢেপা নদীর ওপর ২০১২ সালে নির্মিত সেতুটি দীর্ঘ অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ চরম ঝুঁকিপূর্ণ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও কৃষিজীবী মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন সেতুটি দিয়ে। সেতুর ভাঙা প্লেট, ঢালাই উঠে যাওয়া পাটাতন এবং নিচে দেবে যাওয়া স্তম্ভ যেন ভয়াল কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘দুর্ঘটনা যে কোন সময়’।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রায় ৮০টি পরিবারের ৪০০ জন মানুষ ও ৫০০ একরেরও বেশি জমির কৃষিপণ্যের একমাত্র পরিবহণ মাধ্যম এই সেতু। দ্রুত সেতু পুনঃনির্মাণ না হলে একদিন হয়তো সেটি ধসে পড়বে, আর তাতে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সেতু শুধু কাঠামো নয় এটি জীবনযাত্রার রক্তনালির মতো। প্রতিদিন স্কুলের ছোট ছোট শিশুরা বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে যায় এই সেতুর উপর দিয়ে। কলেজ ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষের মুখে ঝুঁকির ভয় আর অনিশ্চয়তার গ্লানি।
মন্ডলপাড়ার ৬০ বছর বয়সী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, "এই সেতু দিয়েই প্রতিদিন বাজারে যাই, ফসল নিয়ে আসি। কিন্তু এখন প্রতিবার পার হওয়া মানেই প্রাণ হাতে নিয়ে চলা। জানি না কখন যে ভেঙে পড়বে। যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কে নেবে?"
একই এলাকার আঞ্জুআরা বেগম বলেন, "বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে স্লিপ খাই। ছোট ছোট বাচ্চারা কাঁদতে কাঁদতে পার হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বারকে অনেকবার বলেছি, কিন্তু কাজ কিছু হয়নি।"
স্থানীয় কলেজছাত্র নয়ন ইসলাম বলেন, "এটা শুধু একটা সেতু নয়, আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখন এর নিচে দাঁড়ালে বোঝা যায়, ভিতরে ফাঁপা হয়ে গেছে। আমরা দ্রুত একটি নতুন সেতুর দাবি জানাই।"
বলরামপুর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মমতাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। কখন যে খবর আসে, কে জানে! দ্রুত সেতুটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে মাদ্রাসা, স্কুলে ও কলেজ যাতায়াত করতে পারবে।
নিজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, "আমি একাধিকবার উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি তুলেছি। লিখিতভাবে এলজিইডিকে জানাব। আমি এলাকাবাসীর পাশে আছি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।"
বীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জিবরীল আহমেদ বলেন, "আমাদের অফিসে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে যতটুকু জানি, সেতুটি এলজিইডির আওতাভুক্ত নয়। এটি স্থানীয়ভাবে সম্ভবত ২০১২ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যানের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। এ কারণে আমাদের সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। তবুও স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা বা নির্দেশনার ভিত্তিতে যদি কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা অবশ্যই কারিগরি সহায়তা দিতে পারি।"
Mily