
ছবি: সংগৃহীত
একটা রাত। একটা ফেসবুক পোস্ট। আর তাতে কেঁপে উঠেছিল স্বৈরাচার সরকারের ভিত। নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অবিস্মরণীয় অধ্যায় ছিল প্রবাসীদের রেমিটেন্স শাটডাউন। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী তরুণ তারেক আহমেদ।
১৯ জুলাই, আন্দোলনের প্রধান কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। ঠিক তখনই তরুণ প্রবাসী তারেক আহমেদ ফেসবুকে লেখেন "হাসিব নাহিদ না বলা পর্যন্ত এ ধরনের ঘোষণা বিশ্বাস করা ঠিক না।"
এই ছোট্ট বার্তাটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। প্রবাসী আন্দোলনকারীদের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন তারেক। আন্দোলনের আপডেটের অন্যতম উৎসে পরিণত হন তিনি।
তারেক আহমেদ একটি পোস্টে লেখেন, "আমরা যদি দেশের ব্যাংকগুলোতে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করি, তাহলে সরকার টের পাবে আসল শক্তি কাদের হাতে।" এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রবাসীরা শুরু করেন রেমিটেন্স শাটডাউন। কয়েক দিনের মধ্যেই বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি শ্রমজীবী প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দেন। সরকারের উপর চাপ বাড়তে থাকে।
এর প্রতিক্রিয়ায় তখনকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক হাত জোড় করে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেছিলেন, "আপনারা প্লিজ রেমিটেন্স পাঠান। দেশের অর্থনীতি বাঁচান।"
এই দৃশ্য প্রমাণ করেছিল, বিদেশে থাকা লাখো প্রবাসীর হাতে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিহিত।
এই আন্দোলনে শুধু অর্থনৈতিক চাপ নয়, ছিল আত্মত্যাগের ছাপও। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নেমেছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন, অনেকে জেলেও গিয়েছেন।
একজন প্রবাসী জানান, "আমরা শুধু রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করিনি, জীবন দিয়ে দেশের স্বার্থে প্রতিবাদ করেছি। অথচ আমাদের সমস্যাগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে।"
বিমানবন্দরের হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া, ভিসা জটিলতা, এসব সমস্যা এখনও তাদের জীবনের অংশ। তারা চায়, সরকার যেন তাদের কষ্টগুলো বুঝে এবং সমাধানে উদ্যোগ নেয়।
দেশের ভেতরে রাজপথে যখন তরুণরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশের বাইরে থেকেও সমান শক্তিতে একদল তরুণ-প্রবীণ প্রবাসী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
রেমিটেন্স বন্ধের এই সাহসী সিদ্ধান্ত না শুধু সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল, বরং প্রমাণ করে দিয়েছিল, দেশপ্রেম কেবল মাটির কাছাকাছি থাকলেই হয় না, তা হৃদয়ের গভীরতা থেকেও উঠে আসে। এই প্রবাসী যোদ্ধারা ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের নেপথ্যের নায়ক হিসেবে।
ছামিয়া