
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব না।” তিনি বলেন, মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে প্রয়োজন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, আইনের শাসন, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র।
নিজের ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, বাংলাদেশে প্রথম 'মব' ভায়োলেন্স হয়েছিল বিহারি জনগোষ্ঠীর ওপর। এরপর এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র ও তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অথচ মুজিববাদবিরোধীদের ওপর। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি ইন্ধনে গত ৫৩ বছর ধরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর মব ভায়োলেন্স হয়েছে।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, “মবের ডেফিনিশন স্ট্রেইচ করলে তথাকথিত জনতার আদালত, জনতার মঞ্চ ‘৯৬, ২৮শে অক্টোবর, শাহবাগ সবই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স।”
তথ্য উপদেষ্টার মতে, সামাজিক ফ্যাসিবাদ হচ্ছে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদেরই প্রতিক্রিয়া এবং বিকার। তিনি বলেন, “সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও মব মানসিকতা মোকাবেলা করতে হলে এই বাস্তবতা আগে বুঝতে হবে। ইসলামোফ্যাসিস্ট বলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং, জুলাই যে ক্রস-ইডিওলজি ডায়ালগের সুযোগ তৈরি করেছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে এই সামাজিক ফ্যাসিবাদ দূর করতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গত ১৬ বছরের গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের অবক্ষয়ই মব মানসিকতার জননী। এই বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন।”
পোস্টে মাহফুজ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক ও সামাজিক ফ্যাসিবাদের অংশীদার না হয়েও হরেদরে মব ভায়োলেন্সের দায় নিতে হচ্ছে জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে। জুলাইয়ের পরে যদি সত্যিই মব হতো, কিংবা সে সুযোগ তৈরি হতো, তাহলে এত সুশীলতা আর এপলজেটিক আলাপ আসত না।”
তিনি লেখেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্বে থেকে আমাদের কাজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। সে জন্য মব ভায়োলেন্স নিয়ে কয়েকবার বলেছি। স্পেসিফিক কিছু অকেশনে, যেমন মাজারে হামলা, বইমেলা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছি।”
মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, “জুলাই বিপ্লবকে এখন মুজিববাদী বাম এবং লীগের কালচারাল গুন্ডারা জুলাই-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সাথে এমনভাবে জুড়ে দিচ্ছে, যেন জুলাই বিপ্লব শেখ মুজিবের নাতি জয়ের কথামত মবোক্রেসি ছিল।”
তিনি বলেন, “মবোক্রেসি হলে জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা পুলিশ-আনসারবিহীন দেশকে এক-দেড় মাস নিরাপদ রাখতে পারত না। সাজানো স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরকেও ছাত্র-জনতা বাঁচিয়ে দিয়েছিল। স্ক্রিপ্ট বিশ্বাসযোগ্য হবে ভেবেই এমন দেখানো হচ্ছে যে, বিপ্লবী ছাত্র-জনতা প্রতিশোধপরায়ণ ছিল না।”
তার আহ্বান, “জুলাই বিপ্লবে দেশকে আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসা মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে মব বলে জুলাইকে বিষোদগার করা বন্ধ করুন।”
তিনি বলেন, “আইনের ব্যত্যয় ঘটলে, সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটলে আইনের আশ্রয় নিন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জুলাই বিপ্লবের পক্ষের ছাত্র-জনতাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কিন্তু মুজিববাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আপনাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”
পোস্টের এক পর্যায়ে মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা কারবালা পার হতে পারি নাই, এটাই সত্য।”
পুনশ্চ অংশে তিনি লিখেন, “মব মানে বিপ্লবী উদ্দেশ্যহীন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা লালন করা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী। জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য পরিস্কার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অতুল এবং তারাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”
আফরোজা