ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জীবন যুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী নারী রাবিয়া খাতুন

কাউছার আলম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৪ জুন ২০২৫

জীবন যুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী নারী রাবিয়া খাতুন

ছবি: জনকন্ঠ

জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী রাবিয়া খাতুন। বয়স ৪২ কিংবা ৪৫। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভ্যানচালক কাউছার মিয়ার স্ত্রী। ৬ মেয়ে ও ৩ ছেলে নিয়ে তাদের অভাবের সংসার।

বছর পাঁচেক আগে কাউছার মিয়া ভ্যানগাড়ি চালানোর উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবার নিয়ে সুখেই ছিলেন। করোনাকালীন সময়ে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার তাকে ভ্যানগাড়ি না চালাতে পরামর্শ দেন। নিজের একমাত্র উপার্জিত পেশা হারালে অভাব হানা দেয় কাউছার-রাবিয়া দম্পতির সংসারে। একদিকে অসুস্থ স্বামী অন্যদিকে ৯ জন ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। কীভাবে চলবে তাদের জীবন? কি করে জীবিকা নির্বাহ করবে?

জীবন যুদ্ধে রাবিয়া খাতুন ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় জড়াননি নিজেকে। হার মানেনি জীবন সংগ্রামে। একপর্যায়ে সংসারের হাল ধরতে রাবিয়া খাতুন নবীনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজারে ফুটপাতে সবজির বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এ কাজে কিছুটা সহযোগিতা করেন তার অসুস্থ স্বামী কাউছার মিয়া ও পাশের ব্যবসায়ীরা। এতে কিছুটা সফলও হোন তিনি। নিজের সংসার খরচ চালিয়ে ৬ মেয়ের মধ্যে ৫ মেয়েকে ইতিমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছোট দুই ছেলে-মেয়ে বর্তমানে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছেন আর বাকি দুই ছেলে এখন অন্যান্য কাজ করে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন।


স্থানীয়রা জানান, রাবিয়া খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। নিজের সংসার সামাল দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সবজি বিক্রির ব্যবসা করছেন। কখনো কারো সাথে তিনি খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তার দোকানে সবসময় তরতাজা সবজি পাওয়া যায়। তাই তার দোকানে বেচাকেনাও ভাল হয়। 

রাবিয়া খাতুনের স্বামী কাউছার মিয়া বলেন, "আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আগে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতাম। করোনার সময় অসুস্থ হওয়ার পর সবজি বিক্রি শুরু করি কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাও পরিচালনা করতে পারতাম না। এরপর সংসারের কথা চিন্তা করে আমার স্ত্রী আমার সবজি ব্যবসার দায়িত্ব নেয়। আমি যতটুকু পারি তাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে সহযোগিতা করি বাকিটা সে সামলে নেয়। এখন সংসার নিয়ে কোনোভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছি।"

জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী নারী রাবিয়া খাতুন জনকণ্ঠ প্রতিবেদককে বলেন, তার দোকানে যে সবজি বিক্রি হয়, তা থেকে প্রতিদিন পাঁচশো থেকে আটশো টাকার মতো আয় হয়। তার স্বামী অসুস্থ হওয়াতে পাইকারি সবজির বাজার থেকে তাদের সবজি ক্রয় করা সম্ভব হয় না ফলে স্থানীয় আড়তদার কিংবা কৃষকদের থেকে তাদের সবজি ক্রয় করে বিক্রি করতে হয়, যার কারণে তাদের আয় অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে কম হয়। আয় কম হলেও তিনি সবসময় তরতাজা সবজি ক্রয় করে বিক্রি করেন। এর ফলে তার নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতাও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, "তার এই পথ কখনোই সহজ ছিল না। ব্যবসার শুরুতে সমাজ থেকে তীব্র বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। মেয়েদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন, এই প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।"

Mily

×