
গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। বুধবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
ঈদুল আজহা শেষে ঢাকায় ফিরছেন নগরবাসী। তাই রাজধানীর ফাঁকা সড়কে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। তবে ঈদের ছুটি এখনো দুই দিন বাকি থাকায় ঢাকামুখী মানুষের চাপ কিছুটা কম। এবার ঈদে সাপ্তাহিকসহ ১০ দিনের ছুটি শেষ হবে আগামী শনিবার। রবিবার থেকে শুরু হবে অফিস-আদালত। যাত্রাপথের ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই পরিবার নিয়ে একটু আগেই ঢাকা ফিরছেন। বুধবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।
সড়ক পথে যানজট না থাকায় স্বস্তিতেই রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ। কিন্তু রেলপথে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা প্রবেশ করা কয়েকটি ট্রেনে সৃষ্টি হয় সিডিউল বিপর্যয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ট্রেন যাত্রীরা। এ ছাড়া বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি লঞ্চে ঢাকামুখী যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মমুখী অনেক মানুষ। ফলে সড়কে বাড়তে শুরু করেছে মানুষের উপস্থিতি। বাড়েছে অভ্যন্তরীণ যান চলাচলও। তবে যানজটবিহীন ভোগান্তিমুক্ত সড়কে এখনো স্বস্তির যাত্রায় নগরবাসী। বিগত দিনগুলোর তুলনায় বুধবার রাজধানীর সড়কে যানবাহন চলাচল ও মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। রাজধানীর সড়কের কোথাও তেমন যানজট দেখা যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে মানুষদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে বাস স্টপেজগুলোতে কোথাও কোথাও গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস-মিনিবাস, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা এবং সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ও মটোরসাইকেলের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় হাসিব নামে এক যাত্রী জানান, ছুটির এই কয়দিন তো ঢাকা শহরের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পেরেছি। কিন্তু আবার কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থাই হয়ে যাবে। সবাই ঢাকায় চলে আসবে, আবার যানজট। মুরাদ নামে অপর এক যাত্রী বলেন, ‘ছুটির পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও রাস্তায় চলাচলে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পেরেছেন। ঢাকায় আবার সবাই ফিরে আসতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরে আবার আগের মতো অবস্থা হবে।’ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, ঢাকা শহরে ছুটির সময় ঘুরতে ভালো লাগে। কোথাও কোনো যানজট থাকে না। গাড়িতে ঝুলতে হয় না। ঢাকা শহরটা সব সময় এমন থাকলে বেশ ভালোই হতো। মানুষের অনেক সময় বেঁচে যেত।
রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মনির নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়িতে যাত্রী না থাকায় আসার সময় গাড়ি পেতে কিছুটা সময় লেগেছে। বিভিন্ন বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করেছে গাড়ি। তার পরও খুব কম সময়ের মধ্যে চলে আসতে পেরেছি। ছুটির দিনগুলোতে ঢাকা শহরে চলাচল করতে বেশ ভালোই লাগে।’
বিলম্বে ঢাকায় ফিরছে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন।। ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। রেলওয়ের তথ্যমতে, বুধবার ফিরতিযাত্রার দ্বিতীয় দিন। এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ রুটের ট্রেনের সিডিউল ঠিক থাকলেও উত্তরবঙ্গ; বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর সিডিউল বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদ উদযাপন করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা চারটি ট্রেন সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। ওই রুট দিয়ে যাতায়াত করা উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকটি ট্রেনও কিছুটা দেরিতে চলাচল করছে। কারণ, রাজশাহীর চারটি ট্রেনের সিডিউল এলোমেলো হওয়ায় ক্রসিংয়ে পড়তে হচ্ছে অন্য ট্রেনগুলোকে। এতে বেশি সময় লাগছে।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, রাজশাহীর চারঘাটের নন্দনগাছী রেলওয়ে স্টেশনের চারটি আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ (যাত্রাবিরতি) ও স্টেশন সংস্কারের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এতে বনলতা, মধুমতি, সিল্কসিটি ও সাগরদাঁড়ি ট্রেন আটকা পড়ে। এ কারণেই সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। তাই রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে দুপুর পৌনে ২টায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। স্বাভাবিক সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে। পরে দ্রুত যাত্রী নামিয়ে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বনলতা এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
রাজশাহী থেকে সকালে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেসও নির্ধারিত সময়ের পৌনে ২ ঘণ্টা পর ঢাকায় এসেছে। রাজশাহীগামী যাত্রী নিয়ে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস বর্তমানে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। রাজশাহী থেকে সকালে ছেড়ে আসা মধুমতি এক্সপ্রেসও প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে বিকেল ৪টার কিছুক্ষণ পর ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বিকেল ৫টার দিকে অর্থাৎ, ছেড়ে যাবে দুই ঘণ্টা দেরিতে।
এদিকে, পঞ্চগড় থেকে ঢাকা অভিমুখী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও লালমনিরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লালমনি এক্সপ্রেসও প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। ফলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতেও কিছুটা দেরি হবে। ঈদের ফিরতিযাত্রার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেও এ বিলম্ব অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
ভোগান্তিতে ঢাকামুখী ট্রেন যাত্রীরা ॥ রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধের কারণে সিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ট্রেন যাত্রীরা। তীব্র গরমে পরিবার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে তাদের। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এ শিডিউল বিপর্যয় এড়ানো যেতো বলে মনে করেন যাত্রীরা। রাজশাহী থেকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে ঢাকায় আসা যাত্রী আমিনুল হক জানান, নন্দনাগাছী স্টেশন অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে দুদিন আগে। এর মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করলেম বুধবার যাত্রীদের এ ভোগান্তি পোহাতে হতো না। তা না করে তারা অবরোধ শুরুর এক-দেড় ঘণ্টা পর স্পটে এসেছেন।
বনলতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা শাহজাহান নামের এক যাত্রী জানান, রেলওয়ে জানে যে নন্দনগাছীতে অবরোধ চলছে। তারপরও স্টেশন ছাড়াই ফাঁকা মাঠে হঠাৎ ট্রেন এনে থামিয়ে রেখেছে। নারী-শিশুদের নিয়ে এ গরমে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। যাত্রীরা এগিয়ে গিয়ে স্থানীয়দের অনুরোধ করেছে। রেলওয়ের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম জানান, অবরোধের পর আমরা বিষয়টি জেনেছি। আগে থেকে জানতে পারিনি। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর এ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আশা করি, যেটুকু দেরিতে ট্রেনগুলো চলাচল করছে, তা আগামীকাল থেকে ঠিক হয়ে যাবে। যাত্রীরা ঈদের ফিরতিযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন।