ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাহসিকতার নাম রাজু মাহমুদ: হাটহাজারীর সাপ উদ্ধারকারী

মো: মুরসালিন চৌধুরী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ১০:০৮, ২৬ মে ২০২৫

সাহসিকতার নাম রাজু মাহমুদ: হাটহাজারীর সাপ উদ্ধারকারী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ২৪ বছর বয়সী যুবক রাজু মাহমুদ শুধু একজন কলেজ শিক্ষার্থীই নন, তিনি একজন সাহসী সাপ উদ্ধারকর্মীও। হাটহাজারী সরকারি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি গত দুই বছর ধরে মানুষের ভীতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত প্রাণী সাপ উদ্ধারের কাজে নিজেকে নিবেদিত করেছেন।

রাজুর এই ব্যতিক্রমী যাত্রার শুরু হয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। রাস্তার পাশে একটি নিরীহ সাপকে মানুষজন যখন বিনা কারণে পিটিয়ে হত্যা করছিল, সেই দৃশ্য তার হৃদয়ে নাড়া দেয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ভয় নয়—সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রাণীর জীবন বাঁচানোর মধ্যে যে মানবতা লুকিয়ে আছে, সেই মানবতার পথেই হাঁটার অঙ্গীকার করেন তিনি।

রাজুর সাপ উদ্ধারের পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার বাল্যবন্ধু রাকিব। রাকিবের কাছ থেকেই তিনি জানতে পারেন, ‘Wildlife and Snakes Rescue Team in Bangladesh’ নামের একটি সংগঠন সাপ উদ্ধার বিষয়ে পেশাদার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। রাজু সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় সকল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর থেকে রাজু নিয়মিতভাবে সাপ উদ্ধারের কাজে অংশ নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৭০টিরও বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন। প্রতিটি উদ্ধার অভিযানে থাকে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, থাকে মানুষের নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। অনেকেই প্রথমে ভয় পেয়ে যান, আবার অনেকে রাজুকে দেখে সাহস পান, অনুপ্রাণিত হন।

রাজু মনে করেন, “সাপ আমাদের শত্রু নয়, বরং প্রাকৃতিক পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবদান অনেক। আমাদের উচিত এদেরকে না মেরে, নিরাপদে উদ্ধার করে তাদের প্রাকৃতিক আবাসে ফিরিয়ে দেওয়া।”

বর্তমানে রাজু স্থানীয় পর্যায়ে একটি ছোট টিম গড়ে তুলেছেন যারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় পরিসরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছেন, যাতে মানুষ প্রাণীকে ভয় নয়—সম্মান করতে শেখে।

রাজুর মতো তরুণদের উদ্যোগ আমাদের শেখায়, ইচ্ছা থাকলেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তার কাজ শুধু সাপ নয়, মানবতারও উদ্ধার।

নোভা

×