ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বর্ষায় কিশোরগঞ্জের হাওরে নৌকার রাজত্ব

রুবেল হোসাইন,  কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ 

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৬ মে ২০২৫

বর্ষায় কিশোরগঞ্জের হাওরে নৌকার রাজত্ব

বর্ষা এলেই বদলে যায় কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের চিত্র। চারদিকে থইথই পানি, হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন যেন এক বিশাল জলরাশি। চলতি মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি হাওরের ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় স্থানীয়দের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে নৌকা। হাওর অঞ্চলের মানুষজন এখন নৌকায় চড়ে বাজারে যাচ্ছেন, স্কুল-কলেজে সন্তানদের পাঠাচ্ছেন এমনকি হাসপাতালেও যেতে হচ্ছে নৌকায় করেই।

হাওরের অন্তত ৬টি উপজেলা—ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, করিমগঞ্জ ও বাজিতপুরে এই পরিস্থিতি প্রকট। বর্ষা মৌসুমে সড়কপথ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের জীবনযাত্রা পুরোপুরি পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

স্কুলপড়ুয়া শিশুরা নৌকায় চড়ে স্কুলে যায়। কিন্তু অনেক গ্রামে পর্যাপ্ত নৌকা নেই। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষা, কখনো যাওয়া হয়না স্কুলেই। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে যায় বর্ষায়। শিক্ষকরা বলেন, "নৌকা না পেলে ছাত্ররাই আসে না, আমরাও পৌঁছাতে পারি না।"

বাড়ি থেকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা উপজেলা হাসপাতালে যেতে লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মাঝেমধ্যে নৌকা মেলে না, মেলে না দক্ষ মাঝিও। এতে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ে মৃত্যুঝুঁকি।

বর্ষাকালে হাওরের কৃষিজীবীরা কাজ হারিয়ে বসে থাকেন। ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে নতুন চাষ শুরু হয় না। কেউ কেউ মাছ ধরে, কেউ নৌকা চালিয়ে আয় করেন, তবে সবাই সেই সুযোগ পান না। অর্থকষ্টে দিন কাটে অনেকের।

ইটনা উপজেলার বাসিন্দা মোঃ ফকির চাঁন জানান, আমরা প্রতিবছরই এমন অবস্থার মুখোমুখি হই। শিশু, বৃদ্ধ আর অসুস্থদের নিয়ে চলাফেরা খুব কষ্টকর হয়ে উঠে। 

হাওরে এখন অনেকেই ভ্রমণের জন্য ‘ভাড়ায় নৌকা’ চালু করেছেন। কিছু জায়গায় টিনের ছাউনি দেওয়া বড় নৌকাও দেখা যায়, যেখানে পর্যটকরা গান গেয়ে, ছবি তুলে সময় কাটান।

তবে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা আরও উন্নত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা চান, হাওরের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটন শিল্পে রূপ নিয়ে এলাকার মানুষকেও উপকারে আনুক।

নোভা

×