ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চুনারুঘাট রেলস্টেশন: একদা গর্জে ওঠা বাণিজ্য কেন্দ্র, আজ নিঃশব্দ ইতিহাস

আব্দুল্লাহ আল নোমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ২৩ মে ২০২৫

চুনারুঘাট রেলস্টেশন: একদা গর্জে ওঠা বাণিজ্য কেন্দ্র, আজ নিঃশব্দ ইতিহাস

ছবিঃ সংগৃহীত

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো বিস্মৃত ইতিহাস—পুরাতন চুনারুঘাট রেলস্টেশন। একসময় যেখান দিয়ে প্রতিদিন দৌড়ে চলত শত শত মালবাহী ট্রেন, যেখানে বাঁশ, কয়লা, চা ও পাটের গন্ধ মিশে থাকত বাতাসে—আজ সেখানে শুধুই শূন্যতা। জং ধরা লাইন, ভেঙে পড়া ছাউনির নিচে পড়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।

১৯২৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত এই রেললাইনটি ছিল সিলেট অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। চুনারুঘাটের চা বাগানগুলোর উৎপাদিত পাতা, আশেপাশের গ্রামের কৃষিপণ্য, এমনকি ঢাকাগামী যাত্রীদের চলাচল—সবকিছুর কেন্দ্রে ছিল এই স্টেশনটি। তৎকালীন সময়ে এখানেই বসত গ্রামীণ হাট, ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই জমে উঠত বেচাকেনা, কোলাহলে মুখর থাকত প্ল্যাটফর্ম।

কিন্তু স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে সেই গতি থেমে যায়। পণ্য পরিবহন কমে আসে, যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পায়, এবং ধীরে ধীরে রেললাইনটি ‘অচল’ ঘোষিত হয়। এখন স্টেশনের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙা বসার বেঞ্চ, মাটিচাপা দেওয়া রেললাইন আর পরিত্যক্ত গুদামঘর—স্মরণ করিয়ে দেয় হারানো গৌরবের কথা।

স্থানীয়রা বলেন, “আমরা ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতাম। এখন সেই জায়গাটা শুধু ঝোপঝাড়ে ভরা এক ভূতের বাড়ি হয়ে আছে।”

বিভিন্ন সময় সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রেললাইন পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। অথচ পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দিক দিয়ে এ স্থানটির ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর হতে পারত।

চুনারুঘাটের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হয়ে থাকা এই স্টেশন আজ শুধু স্মৃতির পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায়—চুনারুঘাট কি আবার শুনবে রেলের বাঁশির শব্দ? নাকি এই নিঃশব্দতাই চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে?

নোভা

×