
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হালদা নদী শুধুমাত্র একটি জলধারা নয়—এটি প্রাণবৈচিত্র্যের আধার, জীবিকা নির্বাহের উৎস এবং দেশের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এটি দেশের একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে রুই জাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র, যা বৈশ্বিকভাবেও বিরল।
প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই নদীতে মা রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত সেই পোনা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, হালদা নদী থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক পোনা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে—এক তরুণ একটি বিশাল মা রুই মাছ হাতে দাঁড়িয়ে, পাশে রয়েছেন একজন অভিজ্ঞ মৎস্যজীবী। এই ছবিটি কেবল মাছ ধরার মুহূর্ত নয়, এটি প্রকৃতির এক সতর্কবার্তা। ছবিটি দেখিয়ে দেয়, প্রকৃতি যখন নিজ হাতে প্রজননের ভার নেয়, তখন তা হয় টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ। তবে হালদা নদীর এই অনন্য প্রাকৃতিক গুণ আজ হুমকির মুখে।
মূল হুমকিসমূহ হলো:
শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ: নদীর উজানে থাকা শিল্পকারখানা অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলছে নদীতে।
অবৈধ বালু উত্তোলন: ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রকৃতি ও মাছের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে।
অপরিকল্পিত নৌযান চলাচল: প্রজনন মৌসুমে উচ্চ শব্দ ও তরঙ্গের কারণে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না।
জলদূষণ ও অক্সিজেন সংকট: মাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানির গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে হালদা নদীকে রক্ষার দাবি এখন সময়ের আহ্বান। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবিদ, মৎস্যজীবী ও সাধারণ জনগণকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কঠোরভাবে শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণ,প্রজনন মৌসুমে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা,বালু উত্তোলন বন্ধ,স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই সমস্যা অনেকাংশের সমাধান করা সম্ভব।
নোভা