ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টিনশেড স্কুল ঘরটি বিধ্বস্ত অবস্থায় মাটির সঙ্গে মিশে আছে  

বহুমুখী সমস্যায় সংকটে ৩০০ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।।

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২৩ মে ২০২৫

বহুমুখী সমস্যায় সংকটে ৩০০ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া

নিজস্ব টিনশেড ঘরটি বিধ্বস্ত অবস্থায় মাটির সঙ্গে মিশে আছে। এখন মাটির কেল্লার উপরে নির্মিত একটি একতলা ভবনে চলছে পাঠদানের কার্যক্রম। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে সমস্যা সংকুল পরিবেশে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিনের পাটিশান দিয়ে কোনোমতে বসার ব্যবস্থা করেছেন। গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে ক্লাস করতে হয়। কারোই নির্দিষ্ট কক্ষ নেই। শিক্ষার্থী সমাবেশ করতে হয় চলাচলের পথে। হাটাচলার সড়ক নেই। ওয়াশরুমের ভয়াবহ সংকট।

মেনহাজপুর হাক্কানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবেই একটি বছর ধরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।কবে নাগাদ তাঁদের বিধ্বস্ত টিনশেড মূল ঘরগুলো মেরামত করা হবে তা তারা নিজেরাও জানেন না। এক অনিশ্চয়তায় চলছে বিদ্যালয়ের ৩০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম। এই বিদ্যালয়ের অবস্থান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফ উজ্জামান জানান, ২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয় মাদ্রাসার মূল টিনশেড ঘর। প্রায় ১২০ ফুট লম্বা ২২ ফুট প্রস্থ পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট ২৬৪০ বর্গফুটের গোটা টিনশেড ঘরটি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এরপরে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ চলে আসছিল। পরবর্তীতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিয়ে এক শ’ গজ দূরে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্মিত মাটির কেল্লার উপর নির্মিত একতলা ভবনে পাঠদান কার্যক্রম কোনোমতে চলে আসছে। সাময়িকভাবে এটি ব্যবহার করে চলছে পাঠদান। কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠদানের মূল টিনশেড ঘরগুলো এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে  ঘরগুলো। টিন, বেড়া, ছাউনি সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর মাটির কেল্লার ওপর নির্মিত ভবনে সংকুলান হয় না। এছাড়া এটি দূর্যোগকালীন গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য করা হয়েছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকের বসার কক্ষ, পাঠদানের কক্ষ। শিক্ষার্থীদের কমনরুমসহ নানাবিধ সমস্যায় এখন স্বাভাবিক লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। পানির সংকট রয়েছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহা জানায়, তাদের স্কুলঘরটি ঝরে ভেঙে যাওয়ায় এখন তাদের ক্লাশ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

দশম শ্রেণির ফারজানা জানায়, তাদের ওয়াশরুম, কমন রুমের সমস্যা রয়েছে। ক্লাশ চলাকালে এক ক্লাসের কথা অপর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কানে লাগে। শিক্ষার্থীরা একটি বহুতল নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেছেন।
আন্ধারমানিক নদীর তীর ঘেঁষা অবহেলিত জনপদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব বহুমুখী সংকটে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিজস্ব স্কুল ঘরটি মেরামত করা প্রয়োজন।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, বিগত সরকারের সময় একটি ভবন করার জন্য টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটির বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অঃদাঃ) মনিরুজ্জামান খান জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহু আগেই অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাটির কেল্লার উপওে একতলা ভবনে ক্লাস করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তাতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের সমস্যার জন্য মাটির কেল্লায় নির্মিত ভবনটি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে বিধ্বস্ত ঘরটি মেরামত করার পাশাপাশি একটি বহুতল ভবন নির্মাণের।

সজিব

×