
ছবি: জনকণ্ঠ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থানান্তর নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়ে অর্থাৎ বর্তমান স্থানেই বিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত মঙ্গলবার (২০ মে) একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। একই সাথে অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ছনকা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম ও প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাজাহান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের ভুল তথ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তরের একটি চিঠি নিয়ে আসেন। এমনকি রাতের আঁধারে শতাধিক শিক্ষার্থীকে রেখে পশ্চিম পাড়ে কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করেন, যা দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেনের হস্তক্ষেপে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২০ মে একটি চিঠি ইস্যু করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখার উপসচিব সাঈয়েদ এ. জেড. মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে জারি করা বিদ্যালয় স্থানান্তরের পত্রটি বাতিল করা হয়। চিঠিতে আরও নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় নদীর পূর্ব পাড়ে বর্তমান স্থানেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এর আগে ১৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর কাজী ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে পূর্বের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভিন আহমদকে নতুন সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৬ দিনের মাথায় ১৯ মে সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বরখাস্তের চিঠিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারবিরোধী ও শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড, অদক্ষতা, পেশাগত অসদাচরণ, কর্তব্যে অবহেলা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য, বিভিন্ন অনিয়ম, দীর্ঘ দিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকা এবং ফৌজদারি মামলা (নং ০৪/২০২৫) চলমান থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নদীর পূর্ব পাড়েই বিদ্যালয় বহাল থাকার খবরে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, "নদীর পূর্ব পাড়ে স্কুল থাকার চিঠি আসায় আমরা খুব খুশি। এতদিন ক্লাস করতে পারিনি, এখন আমরা নিয়মিত ক্লাস চাই।" ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার এবং আমিনুর রহমানও ক্লাস নিয়মিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "উপজেলা প্রশাসনের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই চরবাসী শিক্ষা সুবিধা পাবে।"
সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন দ্রুত বিদ্যালয় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি তানভিন আহমদ জানান, তিনি প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন এবং অন্যান্য শিক্ষকদের ডেকে পূর্ব পাড়েই নিয়মিত ক্লাস করার অঙ্গীকার করিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, "ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সকল শিক্ষক নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে নদীর দুই পাড়ের সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সকল পদক্ষেপ নিয়েছি, যার ফলে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া ক্লাস নদীর পূর্ব পাড়েই বহাল রাখার চিঠি এসেছে মন্ত্রণালয় থেকে।"
উল্লেখ্য, বরাইদ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত ও চরাঞ্চল। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি চরাঞ্চলের শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এই সংকট কাটিয়ে বিদ্যালয়টি আবার পূর্বের স্থানে তার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারায় এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
সাব্বির