
কালের বিবর্তনে আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলা। গ্রামাঞ্চলে শিশু-কিশোরদের মাঝে এখন আর চোখে পড়ে না আগের দিনের সেই গ্রাম্য খেলাধুলা হা-ডু-ডু, দাড়িয়া বাঁধা, গোল্লাছুট, বউছি, কানামাছি ভোঁ-ভোঁ, লুকোচুরি, মার্বেল, পুতুল বিয়ে–সহ নানা ধরনের খেলা।
আগেরকার দিনের শিশু-কিশোররা যে বয়সে এসব খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকত, এখনকার দিনের শিশু-কিশোররা সে বয়সে যান্ত্রিক খেলা নিয়ে মেতে থাকে। সে কালে পাড়া-মহল্লার শিশু-কিশোররা দলবেঁধে গ্রাম্য খেলায় মেতে হারিয়ে যেত তাদের আপন ভূবনে। অথচ বর্তমানে সেই বয়সের শিশু-কিশোররা গ্রাম্য খেলাধুলা বাদ দিয়ে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট গেমস, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করলেও কালের বিবর্তনে, যুগের গতানুগতিক হাওয়ায় আজ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা দাড়িয়া বাঁধা, মার্বেল, হা-ডু-ডু ও ঘুড়ি উড়ানো। বর্তমান সময়ের শিশু-কিশোরদের দাড়িয়া বাঁধা, মার্বেল, হা-ডু-ডু ও ঘুড়ি উড়ানোর মতো খেলার সঙ্গে কোনো পরিচয় নেই। এমনকি অনেকে জানেন না বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু।
গ্রামীণ খেলার বিষয়ে ঝিনাইগাতীর ফাকরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, আমরা বইয়ের কিছু গ্রামীণ খেলার নাম জানলেও কীভাবে এ খেলা করতে হয় তা কোনো দিন দেখিনি। এমনকি তারা জানেও না এসব খেলার নিয়ম-কানুন। তারা আরও জানায়, পড়ালেখার চাপে খেলার তেমন একটা সময় পাই না, আর যে-টুকু সময় পাই ইন্টারনেটে গেম খেলে আর বন্ধুদের সাথে ফেসবুকে চ্যাট করে পার হয়ে যায়।
ঝিনাইগাতীর পাঞ্জেরী মডেল পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাঁধন জানান, আমরা ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে দাড়িয়া বাঁধা, মার্বেল, হা-ডু-ডু ও ঘুড়ি উড়ানোর মতো অনেক খেলা করেছি। এক সময় স্কুলভিত্তিক আন্তঃজেলা ও উপজেলার হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ ধরনের কোনো আয়োজনও করা হয় না।
তিনি জানান, বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েরা গ্রামীণ খেলার সাথে তেমন একটা পরিচিত নয়। তারা অধিকাংশ সময় কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট গেমস, ফেসবুক ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে সমাজের মানুষের সাথে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এর ফলে তারা নানা রকম অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে।
তিনি মনে করেন, আমাদের সকলের উচিত বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েদেরকে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা সম্পর্কে জানানো এবং বর্তমানের ইন্টারনেট গেম বাদ দিয়ে এ খেলার প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
আফরোজা