ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের গ্রামের বাড়িতে  চলছে শোকের মাতম

এইচ এম মোনায়েম খান, রায়গঞ্জ ,সিরাজগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৯:০১, ১৪ মে ২০২৫

ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের গ্রামের বাড়িতে  চলছে শোকের মাতম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের সংবাদ তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামে পৌছার পর থেকেই নিহতের স্বজন ও আশপাশের লোকজনের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
 
শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান তিনি।

নিহত সাম্যর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সড়াতৈল গ্রামে। বাবা ফরহাদ সরদার ঢাকায় বসবাস করেন। সাম্য চার ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। তার মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। পুরো পরিবার ঢাকাতেই বসবাস করলেও ঈদ বা বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যে সাম্য ও তার ভাইয়েরা গ্রামের বাড়িতে আসতেন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।

সাম্যর বড় চাচা কাউসার আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রাত ১টার দিকে খবর পাই সাম্যকে খুন করা হয়েছে। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা ও আর নেই। আমার ভাইয়ের চার ছেলের মধ্যে সাম্য ছিল সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে প্রাণবন্ত। জানি না কী অপরাধে আমার ভাতিজাকে হত্যা করা হলো। ওদের তো কোনো শত্রু ছিল না। পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন অনেকে ঢাকায় চলে গেছে জানাজা ও দাফনের কাজে। ঢাকায় জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে আর সড়াতৈল কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আমরা চাই যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

নিহতের চাচা কায়সার উল আলম বলেন, ভাতিজা সাম্য হত্যার সংবাদ শুনে গ্রামবাসী ও স্বজনদের ফোন আসতে থাকে। তারা বাড়িতে ভিড় করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এমন সম্ভাবনাময় টগবগে তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমরা কখনো ভাবিনি। ভাবতেই পারছি না আমার ভাতিজার সাথে আর কখনও কথা হবে না।

সাম্যের প্রতিবেশী চাচা কবির সরদার বলেন, সাম্য প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। আমাদের সাথে কুশল বিনিময় হতো। এমন বিনয়ী নম্র-ভদ্র তরুণকে এমন হত্যার শিকার হতে হবে আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। সাম্যর এই করুণ মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো এলাকাজুড়ে  শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসী সাম্য হত্যার বিচার চায়।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ইসলামী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আয়োজনে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সকালে কলেজ এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, "দেশের যে কোন আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। অথচ অত্যাচারা-নির্যাতনের শিকার আমরাই বেশি হয়েছি। অন্তবর্তী সরকারের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে।" দ্রুত হত্যাকারীদের  গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি। 

এ ঘটনায় পুরো দেশজুড়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জোর দাবি, যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকারীরা শনাক্ত ও গ্রেফতার হয় এবং সাম্যের পরিবার ন্যায়বিচার পায়। 

নোভা

×