
.
বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের থেকে জুন নাগাদ আরও ৩৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এসব ঋণ দেবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে অনলাইনে যোগ দিয়ে তিনি এসব তথ্য জানান। এ সময় তিনি বুধবার থেকেই বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালুর ঘোষণা দেন, যা আইএমএফের অন্যতম শর্ত ছিল। এই শর্ত পূরণে এখন মোট ঋণের মধ্যে আইএমএফ ছাড় করবে ১৩০ কোটি ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে আসবে আরও ২ দশমিক ২০০ কোটি ডলার।
ড. মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোকে আজকের সভায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তবে ‘বড় অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপ করবে।’ এ ছাড়া একটি ব্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট থাকবে যা প্রকাশ করা হবে না।
গভর্নর বলেন, ‘ডলার রেট বাজারভিত্তিক করার জন্য অপেক্ষা করছি। এখন আমাদের বাজারভিত্তিক করার সময় এসেছে। তার মানে যে কোনো দামে তা কিনবে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ডলার রেট এখন যে জায়গায় আছে, তার আশপাশেই থাকবে। ১৪০-১৫০ টাকা হবে, এটার যুক্তি
নেই। বাংলাদেশের ডলার রেট এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হবে। অন্যদেশের কথায় এখানে ডলার রেট ঠিক হবে না। বাজারে ডলারের যথেষ্ট সরবরাহ আছে।
ড. আহসান বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ নিশ্চিত হওয়ায় জুন মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক দাতা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ মোট ৩.৫ বিলিয়ন ডলার পাবে।’
আইএমএফ আরো নমনীয় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার চালুর শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশকে যা এত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নে যেতে চায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে দেখা দেয় অচলাবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকও করে আইএমএফ। গত ১৩ মে একাধিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বিনিময় হারে আরও বেশি নমনীয় করার বিষয়ে চূড়ান্তভাবে একমত হয়। গভর্নরের নেতৃত্বে চলা এসব বৈঠকের মাধ্যমেই এ সমঝোতা হয়।
গভর্নর বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে করা চুক্তিতে তারা আমাদের বলেছিল, এক্সচেঞ্জ রেট (বিনিময় হার) বাজারভিত্তিক করার জন্য। তবে সে সময় আমাদের বাজার প্রস্তুত না থাকায় আমরা সেটি বাস্তবায়ন করিনি। বাজারে ডলারের তারল্য থাকার কারণে নতুন বিনিময় হার-বিদ্যমান হারের কাছাকাছিই থাকবে।
এখন জুনের মধ্যেই আইএমএফ ১৩০ কোটি ডলার ছাড় করবে। এর আগে, ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিময় হারে নমনীয়তা বাস্তবায়ন নিয়ে মতবিরোধ থাকার কারণে এই অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছিল। ২০২৩ সালে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে মোট ২৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে গুণগত পরিবর্তনও এসেছে।’
তিনি আরও জানান, কোনো ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ১০ শতাংশ বা তার বেশি যদি খেলাপি হয়, তাহলে সে ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারবে না। তাছাড়া, নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমার ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে দ-সুদ বা জরিমানা পাওনা থাকলে সেসব ব্যাংকের লভ্যাংশ বিতরণেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা ব্যাংক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। যারা অনিয়ম করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে যাতে ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় আমানতকারীদের পাশে আছে। ব্যাংক নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মনোভাব এবং সংস্কারপন্থি অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। গভর্নর দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
প্যানেল