ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ লেনদেন

‘ক্যাশলেস হাট’ চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৪ মে ২০২৫

‘ক্যাশলেস হাট’ চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

.

নগদ টাকার ব্যাবহার কমাতে ‘ক্যাশলেস হাট’ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্যাশলেস হাট মূলত হাটে ক্যাশের ব্যবহার বুঝায়। আসছে কোরবানির হাট ও ঈদ উপলক্ষে মানুষ প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকার ব্যবহার করবে। হাটে এর ব্যবহার কমানোই একমাত্র লক্ষ্য। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কোরবানির ঈদের আগেই নতুন নকশার নোট বাজারে ছাড়বে। দুই টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকার নতুন নোটে থাকবে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নির্দশন। নতুন নোট ছাপানোর পরেও বাজারে নগদ টাকার ঘাটতিও থাকবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংক।  
ক্যাশলেস ব্যবস্থা অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা পেলেও বাংলাদেশে প্রচলন নেই বললেই চলে। যে কারণে এর প্রচার প্রচারণা বাড়াতে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেন অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে গত কোরবানির ঈদে পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস লেনদেনকে সফল করতে এই আয়োজন। ২০২৩ সালে স্মার্ট হাট ক্যাম্পেনের মাধ্যমে মোট ৪৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ২০২৪ সালে ৭০ কোটি টাকার টার্গেট নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হাসান বলেন, এই মাসের শেষের দিকে বাজারো ছাপানো টাকা পাওয়া যাবে। এরপরেও বাজরে নগদ টাকার ঘাটতি থাকবে। যে কারণে ‘ক্যাশলেস হাট’ চালুর বিষয়ে বিশেষ তাগাদা দিয়েছেন। বাজারে যত কম ক্যাশের ব্যাবহার করা যায় সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেন গভর্নর।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সবচেয়ে বেশি ক্যাশলেস লেনদেন করা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আগামী বিশ্ব নগদ টাকা ছেড়ে ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এজন্য ক্যাশলেস অর্থনীতি বা ক্যাশলেস সোসাইটি আলোচনা বহুদিন ধরে চলে আসছে একাডেমিক পর্যায়ে। ক্যাশলেস সোসাইটি বা সমাজের অন্যতম দৃষ্টান্ত বর্তমানে নর্ডিক দেশ সুইডেন, যেখানে এখন নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা চলে, মাত্র ১০ শতাংশের কমসংখ্যক মানুষ এখন ক্যাশ ব্যবহার করে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কে প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ এখন ক্যাশলেস ব্যবস্থার আওতায় চলে গেছে। মূলত ক্যাশলেস ব্যবস্থা আধুনিক অর্থনীতির বিকাশের একটা নতুন অধ্যায়। ক্যাশলেস ব্যবস্থা ব্যবহারের অনস্বীকার্য অনেক সুবিধা আছে যেমন ক্যাশলেসের ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনো সময়, জায়গা থেকে সহজে ও দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করা যায়, ক্যাশলেস ব্যবস্থায় টাকা তৈরির খরচ কম আসে, অতিরিক্ত টাকা সঙ্গে না রাখার জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়, আর্থিক অপরাধ সংখ্যা কমে যায়। এ ব্যবস্থায় কর ফাঁকি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই, প্রতিটি লেনদেনের রেকর্ড রাখা সম্ভব, নকল বা জাল টাকার জালিয়াতি থেকে সুরক্ষিত, হাতে ধরা টাকা-পয়সার আদান-প্রদান বন্ধ হওয়ার কারণে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ কম থাকে এবং সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব নগদবিহীন লেনদেন ব্যবস্থায় বিশ্বে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ১০টি ব্যাংক, তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম এই কাজে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে এ উদ্যোগে যেসব ব্যাংক সম্পৃক্ত করা হয়, সেগুলো হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট এবং আন্তর্জাতিক পরিশোধ স্কিম মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে। শুরুতে ঢাকার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলকে নগদ লেনদেনমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ প্রান্তিক থেকে মাঝারি ব্যবসায়ীকে এই সেবার আওতায় আনা হয়েছে। শীঘ্রই বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে এর আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে এই সেবা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
স্পর্শবিহীন মূল্য পরিশোধ পদ্ধতির কারণে, করোনা মহামারি চলাকালে বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিংসেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে ১১ হাজার ২৯টি সম্পূর্ণ অনলাইন ব্যাংক শাখা, ১৩ হাজারের বেশি এটিএম বুথ, ১ হাজার ২২১টি ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন এবং ২ হাজার ২৫৬টি ক্যাশ রিসাইক্লার মেশিন রয়েছে। বিভিন্ন মার্চেন্ট পয়েন্টে পস টার্মিনালের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৮। দেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডেবিট, ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড গ্রাহক রয়েছে। ৬০ লাখেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহক রয়েছে। মোবাইল আর্থিক সেবা গ্রাহক রয়েছে অনেক। তাছাড়া ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছেন। প্রতিবছর এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ক্যাশলেস সেবা নিতে বা পেতে শুধু একটা ব্যাংকের অ্যাপ থাকলেই চলবে। অ্যাপে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সব ব্যাংকের গ্রাহক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
 ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’ বা নগদবিহীন অর্থনীতির বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। নগদমুক্ত ডিজিটাল লেনদেন প্রক্রিয়ায় দ্রুত লেনদেন করা যায়, এটি নগদ টাকা বহনের খরচ এবং সময় অপচয় কমায় এবং দ্রুত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়। এছাড়া এই ব্যবস্থা রাজস্ব সংগ্রহে সহায়তা করে, সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং অপরাধ হ্রাস করতে সহায়তা করে।

প্যানেল

×