ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

সেরাদের হাতে দিতেই হবে ॥ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১৪ মে ২০২৫

সেরাদের হাতে দিতেই হবে ॥ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে বক্তব্য রাখেন

চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড উল্লেখ করে এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আর কিছু শুনতে চাই না, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের হাতে বন্দর ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দিতেই হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে, রাজি  করাতে হবে।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌ পরিবহন খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবর্তনের ধীরগতি দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুনিয়ার সব জিনিস এত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, আমাদের এটা পাল্টায় না কেন? এটা অনেকের কাছেই প্রশ্ন।
চট্টগ্রাম বন্দর ও আশপাশের চিত্রের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একজন চট্টগ্রামবাসী হিসেবে এপাশে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাড়ি চলে না, আটকে যায়, কী হলো-ট্রাকেভর্তি রাস্তা, মাল খালাস করতে পারছে না। এদিকে প্লেন মিস করে ফেলব কিনা- এ দুশ্চিন্তা। কারোরই এটা সম্পর্কে চিন্তা না করে উপায় নেই। কথাবার্তা বলেছি, মাঝে মাঝে লেখালেখি করেছি। তো, এবার যখন সুযোগ পেয়েছি প্রথমদিন থেকেই চেষ্টা করছি এটার দিকে নজর দেওয়ার। কীভাবে এটাকে পরিবর্তন করা যায়। লুৎফে সিদ্দিকীকে (বিশেষ সহকারী) দায়িত্ব দিলাম, এটা তোমার দায়িত্ব, যেমনে পারো মেরে ধরে এটাকে সোজা করতে হবে। এটাকে সত্যিকারের বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে।
বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা খুবই ইমপ্রেসড, যেগুলো ছবি এখানে দেখাল, ভালো লাগে, গর্ব লাগে। কিন্তু দুনিয়া তো এখানে আটকে নেই। দুনিয়া এর চেয়ে বহুদূর চলে গেছে। স্ক্রিনে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিশ্বের বন্দর পাশাপাশি দেখালে বোঝা যেত, আমরা কোথায় পড়ে আছি। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ পিছিয়ে থাকা নিয়ে কারও কোনো দুঃখ দেখি না। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে, এখানে গোলমাল, ওখানে গোলমাল, কিন্তু সার্বিকভাবে যে পরিবর্তন দরকার, এটার গরজ কারও আছে বলে মনে হয় না।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা দ্রুত বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাখাওয়াতকে (নৌ পরিবহন উপদেষ্টা) বললাম, আর কিছু শুনতে চাই না। এটার পেছনে থাক। অমুক তারিখের মধ্যে এ গুলো সব দিয়ে দিতে হবে। পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে বন্দর ব্যবস্থাপনা দিতে হবে। মানুষকে রাজি করাতে হবে। মানুষকে গররাজি করিয়ে করার দরকার নেই, রাজি করিয়ে কাজ করতে হবে। এটা এমন একটা বিষয়, পুরো বিষয়টা শুনলে গররাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরকে অর্থনীতির হৃৎপিন্ড হিসেবে অবিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা এ হৃৎপিন্ডকে অনেক বড় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ হৃৎপিন্ডকে বিশ্বসাইজের হৃৎপিন্ড হতে হবে। এ হৃৎপিন্ড শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গেও সংযুক্ত, যে কারণে নেপালের কথা বললাম, ভুটানের কথা বললাম, সেভেন সিস্টার্সের কথা বললাম, সবার হৃৎপিন্ড একটাই। নেপালের তো হৃৎপিন্ডই নেই। নেপাল, ভুটান, সেভেন সিস্টার্স যদি এটার সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে তারাও লাভবান হবে, আমরাও লাভবান হব। যারা এটাকে বাদ দেবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা তাদেরও কাম্য নয়, আমাদেরও কাম্য নয়। আমরা চাই সবাই মিলে আমরা যেন বন্দর থেকে অর্থনীতির শক্তিটা পাই।
চট্টগ্রাম বন্দর শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিদেশীদের যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মাঝেমাঝে আমরা শুনি বিদেশীদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কি ইন্ডিয়াতে স্বাস্থ্যের জন্য যান না? দলে দলে যান, যখন বন্ধ করে দিয়েছে তখন বলছেন, কেন যেতে দিচ্ছে না? কাগজ উল্টালে দেখা যায়, নেতারা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে, ব্যাঙ্ককে যাচ্ছে। কিন্তু বন্দরের কথা যখন আসে, না না এখানে কেউ আসতে পারবে না। ভাই, আমাদের চিকিৎসা দরকার তো। এই হৃৎপিন্ডের চিকিৎসা দরকার। এটার পেছনে আমাদের বিশেষ সেরা চিকিৎসক আনতে হবে, যেন এটাকে বিশ্বসাইজের হৃৎপিন্ড বানিয়ে নেওয়া হয়, কোনো সমস্যা যাতে না হয়। এই হৃৎপিন্ড ক্রমাগত মজবুত হবে, ক্রমাগত শক্তিশালী হবে, ক্রমাগত বৃহত্তর হবে।
বন্দর পরিচালনায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হলে কীভাবে লাভবান হওয়া যাবে তার উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, এমন হলে আমাদের কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার। তোমরা বানাও, তোমরা কাজ কর, রোজগার কর, এ মেয়াদের মধ্যে আমাদের দিয়ে দিতে হবে। আমরা এক পয়সাও খরচ করব না। তখন আমাদের পয়সা বেঁচে গেল, কাজটা হয়ে গেল। তারা দুনিয়াতে শত শত পোর্ট পরিচালনা করে, তারা হলো দুনিয়ার সেরা, যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। পৃথিবীর যেকোনো বন্দরে যান তাদের মার্কা দেখবেন। তারা সর্বশেষ প্রযুক্তি, সর্বশেষ অভিজ্ঞতা এখানে আনবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে, এই বন্দর আমরা এমনভাবে করব যাতে টাকাটা ওঠাতে পারি, আরও বেশি টাকা ওঠাতে পারি।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে বেশ কয়েকটি টার্মিনাল নির্মাণের ফলে কন্টেইনার জট কমবে। আশা করি, ৬ মাসের মধ্যে আপনারা পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামানও বক্তব্য রাখেন। তিনিও বন্দর উন্নয়নে সরকার গৃহীত নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

প্যানেল

আরো পড়ুন  

×