
পুশ ইন ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কঠোর টহল। বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি থেকে তোলা
ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইনের সময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে থেকে নারী-পুরুষ শিশুসহ ১৫ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আরও অন্তত ১৩৫ জন ভারত থেকে অনুপ্রবেশ করে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। তবে তাদের মধ্যে কতজন ভারতীয় নাগরিক, আর কতজন বাংলাদেশ নাগরিক সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এরা সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলছে। যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনার পর থেকেই মৌলভীবাজারের সবকটি সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৫ জনকে বিজিবি আটক করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শীব নারায়ণ শীল। তিনি বলেন, ‘বিজিবি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৫ জন লোককে আটক করে। এর মধ্যে নয়জন পুরুষ, তিনজন নারী ও তিনজন শিশু রয়েছে। এদের বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।
শিব নারায়ণ শীল আরও জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে তারা ভারতের আসামে বসবাস করে আসছিল। হঠাৎ করে ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিক ভা-ারে নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তারা প্রায় তিন শতাধিক লোক ছিলেন। বিএসএফ তাদের কয়েকজনকে ধলই সীমান্ত দিয়ে গেট খুলে বাংলাদেশে প্রবেশ করায়। তবে অন্যদের কোনো সীমান্তে নিয়ে গেছে তারা বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়ন সিও এর সঙ্গে মুঠোফেনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মুঠোফন রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এইচ. কে. এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সংঘটিত যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে যাতে কোনো সন্ত্রাসী ও অবৈধভাবে যাতে দেশের সীমানা দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইজিপি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করেছি। তবে পুশ ইন বা কোনো নাগরিক আটক হওয়ার খবর আমাদের জানা নেই।
খাগড়াছড়ির সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার ॥ খাগড়াছড়ি থেকে জানান, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা ও পানছড়ির ৩ সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিএসএফের মাধ্যমে বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশকারী ৭২ জনের বিষয়ে প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন করে জেলার কোনো সীমান্তে পুশইনের খবর পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা।
আটককৃতদের স্থানীয় বাড়ি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তবে আটকদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানবিক কারণে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। বর্তমানে তারা বিজিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এদিকে পুশইন আতঙ্কে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই দাবি প্রশাসনের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ও বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার ও পানছড়ির ৩টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭২ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করেছে বিএসএফ। তার মধ্যে মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, তাইন্দং-এর আচালং সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের রুপসেন পাড়া সীমান্ত দিয়ে ৩০ ভারতীয় নাগরিককে পুশ ইন করা হয়। বিজিবির হাতে আটক এসব ভারতীয়রা বর্তমানে পৃথক তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।