
ছবি : সংগৃহীত
১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়েছিল রাবার ড্যাম। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিলো ড্যামের পানি ব্যবহার করে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করবে। ভুল পরিকল্পনা, অসমাপ্ত কাজের কারনে নির্মাণের পর একদিনও ব্যবহার হয়নি এটি। তাই ১৫ বছরে কৃষকদের প্রতিক্ষার অবসান হয়নি, কর্তৃপক্ষেরও নজরে আসেনি এই ড্যাম।
কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদী পেরিয়ে রৌমারী উপজেলা। সীমান্তবর্তী এই এলাকার যাদুরচর ইউনিয়নে খেওয়ারচরে জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ড্যামটি।শুষ্ক মৌসুমে ড্যামের সাহায্যে পানি ফসলে ব্যাবহার করাই ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। যার ফলে কৃষি কাজ হতো সহজ, ও উৎপাদন ব্যায় কমতো কৃষকের।
২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও ভুল পরিকল্পনা আর অসমাপ্ত কাজের কারণে সেচের সুবিধা নিতে পারেনি হাজারো কৃষক। তাই পরিকল্পনাহীন এই প্রকল্পে সরকারের অর্থ নষ্টই হয়েছে শুধু।১৫ বছরে শুধু হতাশাই দিতে পেরেছে ড্যামটি কৃষকদের।
পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এই ড্যামের আওতায় কমপক্ষে ৩ হাজার কৃষকের ২.৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হতো । কমতো শ্রম ও হ্রাস হতো অর্থের।
প্রকল্পটির সুরক্ষার জন্য ২ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
নির্মাণ করা হয়নি কৃষকদের ফসলের মাঠ পর্যন্ত ক্যানেল বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা।দীর্ঘদিন অব্যবহিত থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ড্যামের ব্যাগটি।কয়েক যায়গায় ব্রীজটিতে ফাটল ধরেছে।
তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে পাম্পের ঘরটি।
এই এলাকার কৃষক ময়েজউদ্দিন বলেন,'সরকার এটা আমাদের দিয়েছে, এটা দিয়ে আমরা যাতে সেচ দিতে পারি। কিন্তু এখানে সেচের কোন কাজই হয়নি। এই কাজটা খালি ফাও হয়েছে। কৃষকদের জমিতে আবাদ করার জন্য হয়েছিল রাবার ড্যাম। কিন্তু এখানে সেই সেচও নাই, আবাদও নাই'।'
রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শুনেছিলাম, রাবার ড্যাম দিয়ে পানি উঠবে, এবং আমারা জমি চাষ করব। আমরা এখন শ্যালো মেশিন দিয়ে বেশি টাকা খরচ করে আবাদ করছি। অনেক বছর হল এটা পরে আছে। আমার মনে হয়, এই কাজটা অনেক দুর্বল হয়েছে, তাই কাজে আসছে না। এটা দিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, ব্রিজের পূর্ব পাশে অনেক এলাকা ভেঙ্গে যাচ্ছে। ব্রিজের কয়েক জায়গায় ফাটল ধরেছে, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনরকম পারাপার হচ্ছি'।
রৌমারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন , ২০১০ সালে যে রাবার ড্যামটি নির্মাণ হয়েছিল, এটি মূলত আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এলজিডি বাস্তবায়ন করেছিলো।এই রাবার ড্র্যামটি নির্মাণে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল,বিধার এটি খুব একটা কাজে আসেনি। আমরা বিভিন্ন সময় সেখানে গিয়েছিলাম, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি, কথা বলেছি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে। আমরা ড্যামের আশেপাশে কৃষককে বিভিন্ন ট্রেনিংও দিয়েছি। কিন্তু ড্যামের যে সাইট ড্রেন নির্মাণ করার কথা ছিল সেগুলো নির্মাণ না হওয়ার কারণে এই ড্যামের সুবিধা থেকে কৃষকরা বঞ্চিত।'
রৌমারী উপজেলার উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মনছুরুল হকের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন,'এটা অনেক আগের কথা, তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছিল সঠিকভাবেই, এটার দায় দায়িত্ব এখন সমিতির'।
আঁখি