ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৭ মে ২০২৫

পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার

ছবি: জনকণ্ঠ

লালমনিরহাট জেলার হাটবাজার, সড়কের মোড়ে, পাড়া-মহল্লায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে (এলপিজি) গ্যাসের সিলিন্ডার। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাসের সিলিন্ডার। সচেতনতার অভাব এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় যেখানে-সেখানে অবৈধভাবে মজুদ করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সিলিন্ডার বেচাকেনা চলছে—যেন দেখার কেউ নেই।

বেশিরভাগ ব্যবসায়ী জানেন না যে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া এ ব্যবসা অবৈধ। সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান থাকলেও কার্যত এর প্রয়োগ নেই।

ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে, পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে, এমনকি পান-সিগারেটের দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। আইনের তোয়াক্কা না করে চায়ের দোকানে চুলার পাশে মজুদ করে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে।

আবার বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ নেওয়ার তোয়াক্কা করছেন না তারা। এক দোকানে নানা ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসবোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চা ও পানের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট, মনোহরি ও মুদি সামগ্রী বিক্রির দোকানেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।

এ ব্যবসা সম্পর্কে অনেক ব্যবসায়ীর কোনো ধারণা না থাকায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আতঙ্কের কথা বলছেন অনেক ক্রেতা। ট্রাকযোগে ও ভ্যানের মাধ্যমে সিলিন্ডার পৌঁছে যায় দোকানে। ট্রাক থেকে ছুঁড়ে ফেলে গ্যাস সিলিন্ডার নামানো হয়। এতে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

লালমনিরহাটে মূলত প্রশাসনের তদারকির অভাবে লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাভ কম থাকলেও অন্যান্য পণ্যসামগ্রির বিক্রির আশায় পুঁজি খাটিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন তারা। মূলত ক্রেতার চাহিদার কারণে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়।

গোশালা বাজারের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুদি দোকানদার বলেন, "কাস্টমার চায় যাতে তাদের অন্য দোকানে যেতে না হয়, সে জন্য গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। তবে বিভিন্ন সময় গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের কথা শুনেছি। মাঝে মাঝে ভয়ও লাগে।"

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস লালমনিরহাট স্টেশন অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, "লালমনিরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে যত্রতত্রভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস থেকে সতর্কতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।"

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, "বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার কেউ যেন বিক্রি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। গত কয়েকদিনে হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সচেতনতার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।"

×