ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

কেঁচো সারে ঘুরছে শাহজাহানের ভাগ্যের চাকা

ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর 

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৩ মে ২০২৫

কেঁচো সারে ঘুরছে শাহজাহানের ভাগ্যের চাকা

ছবি: জনকণ্ঠ

পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনে সফল লক্ষ্মীপুরের মো. শাহজাহান। প্রতি মাসে তার উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টনের বেশি কেঁচো সার বাজারজাত হচ্ছে।

এসব উৎপাদনকৃত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকরা ফল ও ফসলি জমিতে ব্যবহার করছেন। মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে কৃষকরাও শাহজাহানের উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহারে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে। 

মো. শাহজাহান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের মৃত নজিব উল্লাহর ছেলে। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি এক সময় ইট ভাটা শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ২ টি রিং দিয়ে উৎপাদন কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার এ সারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা সবজিতে ব্যবহার ঝুঁকে পড়েন। সে থেকে এ জৈব সারের চাহিদা বাড়তে থাকায়  ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট’ নামে একটি খামার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। 

এ লক্ষে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের পৃথক ১১ টি হাউজ তৈরি করেন। প্রতি হাউজে ১২-১৪ কেজি গোবর ও পাঁচ কেঁজি কেঁচো থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ টন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদিত হয়। প্রতি মাসে শাহজাহানের খামার থেকে প্রায় ১২ টন কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। যা তিনি প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন। 

কেঁচো সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল (গোবর) উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি ও খামার থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি কেজি গোবর সাড়ে ৩ থেকে ৪ টাকা দামে ক্রয় করে থাকেন।   

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কেঁচো সার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং চাষের খরচ কম হয়। কেঁচো সারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। আর মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় বিধায় কেঁচো সার ব্যবহারে সেচের পানি কম লাগে। রাসায়নিক সারের চাইতে খরচ অনেক কম হয় এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে। তাছাড়া ফসলের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে।  

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, কেঁচো সার ব্যবহার করে সবজি ও ধান ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এদিকে সবজি চাষ বেশি হয়। আর কেঁচো সার সবজির জন্য উপকার। এছাড়া রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম করায় ফসল উৎপাদনে খরচ কমেছে এবং ফলনও ভালো হচ্ছে। 

মো. শাহজাহান বলেন, ‘কৃষকেরা জমির গুণাগুণ ঠিক রেখে অল্প খরচে নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদন করতে পারে এ লক্ষ্যে আমি ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট' খামার নিয়ে কাজ করছি। প্রতি মাসে আমার খামারে উৎপাদিত তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি। শ্রমিক ও উৎপাদন খরচ বাদে ৬০ হাজার টাকার বেশি লাভ হয় প্রতি মাসে। এছাড়া আমার কাছে প্রায় ২'শ কেজির মতো কেঁচো রয়েছে। সেখান থেকেও বিক্রি করছি।

কেঁচো সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লক্ষ্মীপুর ছাড়াও ভোলা এবং চট্টগ্রামের কৃষকরা আমার থেকে কেঁচো সার ক্রয় করেন। বর্তমানে খামারে ৩৫ থেকে ৪০ টনের চাহিদা থাকলেও ২৫ টনের বেশি  উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব গরুর খামার ও সার তৈরির হাউজ বাড়ানো গেলে কৃষকদের চাহিদা পূরণ করা যেতো। 

আরও বলেন, বর্তমানে অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকছে। আমার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ২৫ জন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্বল্প পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। কেঁচো সারের ব্যাপক চাহিদা। 

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান ইমাম বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তা শাহজাহানের ভার্মি কম্পোস্ট খামারে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন ও দিকনির্দেশনা দিয়েছি। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেঁচো সারের জুড়ি নেই। কেঁচো সার ব্যবহারে মাটির জৈবশক্তি বৃদ্ধি পায় ও পিএইচ মান সঠিক মাত্রায় থাকে। এ ছাড়াও মাটির প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির পানির ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে ফসলের ফলন ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে। এ কারণে প্রতিনিয়ত কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কেঁচো সারের চাহিদা বাজারে ব্যাপক বেড়েছে। নতুন নতুন অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এ সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে ঝুঁকি ও পরিশ্রম দুটোই কম।’

শহীদ

×