
রামপালে বোরো ধানের আবাদ বাড়ছে
প্রতিকূল পরিবেশ ও তীব্র লবণাক্ততার মধ্যেও রামপালে বোরো ধানের আবাদ বাড়ছে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। লবণসহিষ্ণু জাতের উন্নতবীজ, কৃষি প্রণোদনা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সেচ ব্যবস্থা সহজ করার ফলে এ উপজেলায় আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট ৪ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর এবং উফশী জাতের আবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এতে মোট চাল উৎপান হয়েছে মোট ২২ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন।
কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছর পূর্বে এ উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির বিরাট ফারাক ছিল। এই খাদ্য ঘাটতি কমেছে মূলত বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, বিনামূল্য কৃষকদের মাঝে লবণ সহিষ্ণু বীজ-সার সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা, রোগবালাই দমনে ও যথা সময়ে সেচ নিশ্চিত করা, জমির গুণাগুণ বুঝে সঠিক জাত নির্বাচন করাসহ নানানভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে খাদ্য উৎপান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২/১ বছরেই এ উপজেলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা গেলে নবণাক্ত রামপাল ও মোংলা উপজেলায় ধানের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি সম্ভব হবে বলে আশা করছি। এ জন্য সমন্বিত কৃষি পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২ বছর আগের এক জরিপে দেখা গেছে, এ জেলায় চাষ যোগ্য তিন হাজার ৮৮০ হেক্টর জমি পতিত ছিল। যা দ্রুত আবাদের আওতায় আনার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কৃষকদের সর্বপ্রকার সহায়তার বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে এ জেলায় বোরো, তেলবীজ ও সবজিসহ সার্বিকভাকে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে।’
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এবার জেলায় ৬২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ৭শ’ ৭৬ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১০৪ শতাংশ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬৭৯০ মেট্রিক টন চাউল। বাম্পর ফলন হওয়ায় অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে।’
রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়ালিউল ইসলাম জানান, আমরা চেষ্টা করছি কৃষিতে বিশেষ করে আমন ও বোরো ধান আবাদ বৃদ্ধি করতে। এ জন্যে সরকারি বেসরকারিভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি তাদের প্রণোদোনার আওতায় এনে চাষাবাদ বাড়াতে। এ উপজেলায় প্রচুর জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোতে আবাদ বাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে চাষে বড় বাধা মিষ্টি পানির অভাব। কোথাও কোথাও আবাদি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
এসব জমিতে পুকুর খনন করে বা গভীর নলকূপ স্থাপন করা গেলে এবং মিষ্টি পানির সরবরাহ বাড়ানো গেলে এখানে দ্বিগুণ ধান উৎপাদন সম্ভব। এ জন্যে সচেতনমহল, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি ও কৃষকদের নিয়ে একটি দীর্ঘ মেয়াদি কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। জমিতে সেচের জন্য মিষ্টি পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিরলস চেষ্টা করছি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিরলস প্রচেষ্টায় এখানে কৃষিতে বিপ্লবের ছোঁয়া লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে রামপাল উপজেলায় ৪ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তারপরেও তীব্র লবণাক্ততা, দাবদাহ ও মিষ্টি পানির অভাবে সব জমি আবাদের আওতায় আনা যায়নি। কিন্তু কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের লবণসহিষ্ণু উন্নত জাতের বীজধান, সার ও কৃষি উপকরণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করায় বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও বোরোর আবাদ বাড়ছে। কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
কৃষক যাতে বেশি করে ফলন করতে পারেন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব কিছু করা হচ্ছে। আশাকরি সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে রামপালে আমাদের কৃষক আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কৃষিতে রামপালে আবারও বিপ্লব ঘটবে।’
উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের কৃষক মোন্তাজ মোল্লা, সিংগড়বুনিয়া গ্রামের কৃষক বাকি বিল্লাহ ও হুড়কা ইউনিয়নের পার্থ কুমার জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সময়মতো বীজ, সার, কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ পাওয়ায় আমরা ভালো ফসল পেয়েছি। আশাকরি আগামীতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকলে কৃষক উপকৃত হবে, আরও ভালো ফসল ফলাতে পারব।’ গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মারুফুল ইসলাম জানান, ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। পোকামাকড় দেখা যায়নি, আবহাওয়া অনুকূলে ছিল।’
রামপাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না ফেরদৌসি জানান, সরকারের দিকনির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে বোরো আবাদ বৃদ্ধিরজন্য সব কিছু করছি। সার, বীজ ও কৃষিতে যান্ত্রীকিকরণ ও মনিটরিংয়ের ফলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক।