
ছয় লেন প্রকল্পে কাজ চলছে ধীর গতিতে
যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ছয় লেন প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও দেশের মধ্যাঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ানো। কিন্তু প্রকল্প শুরুর পর চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ভেহিকেল ওভারপাস, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হলেও সড়কের আকার বৃদ্ধি ও বালু-মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়নি আজও।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় মহাসড়কের মূল আকার বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ছয় লেন প্রকল্পের অধীন মহাসড়কের মূল নকশার দ্রুত বাস্তবায়ন বা দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা জরুরি।
এদিকে ছয় লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে কোনো সংস্কার হয়নি। কোথাও কোথাও ইট-বালু দিয়ে যানবাহন চলাচলের সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মাগুরা-কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, উত্তরবঙ্গ ও ঢাকাগামী যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে বেড়েছে ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ছয় লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। এর মধ্যে ব্যয় একই রেখে প্রকল্পে মেয়াদ একবার বাড়িয়েছে সরকার। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সার্বিক অগ্রগতির চিত্র দেখে প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম লটে রয়েছে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক। দ্বিতীয় লটে মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে মুরাদগড় পর্যন্ত ১৫.৮ কিলোমিটার সড়ক। মুরাদগড় থেকে যশোরে পর্যন্ত বাকি অংশটুকু তৃতীয় লটে রয়েছে। প্রথম লটে দুটি ভেহিকুলার ওভারপাস (ভিওপি), ২২টি কালভার্ট ও দুটি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে ভেহিকুলার ওভারপাস, একটি সেতু ও আটটি কালভার্টের কাজ শুরু হয়েছে। কালভার্টের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন লট-১ এর সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মিলন আলী। এ ছাড়া লট-২ এর অধীন একটি সেতু, দুটি ভিওপি ও ১৯টি কালভার্ট রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী, চুটলিয়া, ও ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। গার্ডার ও পিআর নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। সেইসঙ্গে ভেহিকেল ওভারপাসের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হওয়ায় গার্ডার নির্মাণের কাজ চলছে। চুটলিয়া মোড়ে লোড টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। তবে মূল সড়ক তৈরির জন্য এখনো জমি বুঝে পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের অধীন ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ ও যশোর সদর উপজেলার মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের অধীন মহাসড়কটিতে থাকবে একটি শর্ট ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস। এ ছাড়া প্রকল্প করিডরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করার কথা রয়েছে।
উইকেয়ার ফেজ-১ এর ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মিলন আলী বলেন, ‘সড়কের মূল অংশের কাজের অগ্রগতির জন্য জমি অধিগ্রহণ জরুরি। এখন পর্যন্ত লট-২ এর জমি অধিগ্রহণের কাজ বেশ এগিয়েছে। তবে লট-১ এর ব্যাপারে নানামুখী চ্যালেঞ্জ আছে। জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তবে যতটুকু জেনেছি, বর্তমান জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের আন্তরিক তৎপরতাও বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস থেকে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে টাকা পরিশোধ করা হলেও বৈদ্যুতিক খুঁটি এখনো সরাতে পারেনি। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর কাজ আটকে আছে।’
গড়াই বাসের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যশোর থেকে ঝিনাইদহ বাইপাস পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। বিষয়খালী, তেঁতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর, খয়েরতলা, নিমতলা, আগমুন্দিয়া এলাকায় সড়ক ভেঙে একাকার। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জানি না কবে ছয় লেনের কাজ শেষ হবে।’
ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এলএও) প্রধান সহকারী আলাউদ্দীন বলেন, ‘সরকারের সব বিভাগ তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি করেছিল। গণপূর্ত বিভাগ সড়কের দুপাশের স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের হিসাব জমা দিয়েছে। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজ শেষ হবে।’