ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

১৭ বছর পর বাড়ি ফিরে খুঁজে ফিরছেন  হারানো স্মৃতি

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

১৭ বছর পর বাড়ি ফিরে খুঁজে ফিরছেন  হারানো স্মৃতি

বাবা-মার সঙ্গে সাদেকুল

২০০৭ সালে নিখোঁজ হন সাদেকুল ইসলাম (৪২)। এরপর ২০১৫ সালের ১১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ বছর ভারতের কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবশেষে এ বছরের ২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। নিখোঁজের ১৭ বছর পর নিজ বাড়ি বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফেরেন। এতে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। খোশগল্পে মেতে ওঠেন, খুঁজে ফেরেন হারানো স্মৃতি। সাদেকুলের পরিবার ১৭ বছর ধরে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ধরে নিয়েছিল তিনি আর জীবিত নেই। কিন্তু আট মাস আগে বীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে তারা জানতে পারেন সাদেকুল ইসলাম ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর থেকে বাড়িতে বইতে শুরু করে আনন্দের ঢেউ। বাকি ছিল মেলবন্ধন। অবশেষে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টার ফলে গত ২৪ ডিসেম্বর সাদেকুল ইসলাম তার নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। এ সংবাদ পেয়ে তার বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও।
সাদেকুল ইসলামের বাবা আকবর আলী কৃষক ও মা সিদ্দিকা বেগম গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় সাদেকুল। ২০০০ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি কোটাপাড়া গ্রামে বিয়ে করে সাদেকুল। বিয়ের পর একটি ছেলে সন্তানের বাবা হন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু হঠাৎ ২০০১ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দিন দিন বাড়তে থাকে তার এই সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী দুই বছরের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায় বাবার বাড়ি। এ সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় পরিবারের লোকজন। তাকে সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। 
সাদেকুল জানান, নিখোঁজ হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তার মনে পড়ে না। তিনি যখন কিছুটা সুস্থ হন, তখন জানতে পারেন তিনি কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে সুস্থ হলে বাড়ির ঠিকানা মনে পড়ে তার। এ সময় শুক্লা নামে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। তাকে বাংলাদেশে বাড়ির ঠিকানা জানালে, তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।
সাদেকুলের বাবা আকবর আলী বলেন, ছেলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরে আমার সঙ্গে সংসারের কাজে যোগ দেয়। এরপর বিয়ে করে ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর, সে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তার কোনো খোঁজ পাইনি। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সে আর বেঁচে নেই। ১৭ বছর পর তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। যার মৃতদেহ ফিরে পাওয়ার আশায় ছিলাম, তাকে আজ সুস্থ ফিরে পাওয়ায় পৃথিবীটা আমার কাছে নতুন মনে হচ্ছে। সবার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। সাদেকুলের ছোট ভাই আজিজুল হক বলেন, ভাইকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। তাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। বীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন পেলে বিধি মোতাবেক সরকারি সব সুযোগ-সুবিধার জন্য পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। 

×