ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জনবল সংকট

কলাপাড়ায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ১০ নভেম্বর ২০২৪

কলাপাড়ায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

.

চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে কলাপাড়ার ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে আসা রোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে। একই দশা উপজেলার কুয়াকাটা ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। মাত্র ৩-৪ চিকিৎসক তাদের অফিস চলাকালে এ পরিমাণ রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিজিট দিয়ে রোগীদের অফিস সময়ের পরে বাইরে চেম্বারে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। ফলে দরিদ্র রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

একইভাবে ভর্তি হওয়া রোগীর চাপও থাকছে অনেক বেশি। ৫০ শয্যার উপজেলা সদরের এ হাসপাতালটিতে শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চেয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ ২৭ জন, নারী ২০ জন, শিশু ছেলে ১০ ও মেয়ে ৭ জন মিলে মোট ৬৪ রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ২-৩ জন ডেঙ্গু রোগী শণাক্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বহির্বিভাগের অবস্থা আরও জটিল। দুপুর পর্যন্ত ৩৩৭ রোগী চিকিৎসাসেবার জন্য স্লিপ সংগ্রহ করেছে। জানা গেল, বৃহস্পতিবারে আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নেয় ৩৮৮ জন। চিকিৎসক  জেএইচ খান লেলিন ও কামরুন্নাহার মিলির চেম্বারের  ভেতরে ও সামনে রোগীর ভিড়।  সামাল দেওয়া কষ্টকর। 
কলাপাড়া উপজেলা সদরসহ কুয়াকাটা এবং মহিপুর নিয়ে মাত্র ১১ চিকিৎসক কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসককে অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক প্রেষণে পটুয়াখালী রয়েছেন।

অথচ চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬ জনের। কলাপাড়া উপজেলা সদরে মাত্র চার চিকিৎসক বহির্বিভাগে দৈনিক তিন-সাড়ে তিনশ’ রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীদের খাবারের মান নিয়ে এন্তার অভিযোগ। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী পারভিন জানান, চারদিন আগে  সে ভর্তি হয়েছে। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচ্ছেন।

হাসপাতালের আরেক বড় সমস্যা তিন ফেজ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। সিঙ্গেল ফেজ সংযোগ থাকায় লোডশেডিং-এর কবলে পড়তে হয়। জেনারেটর থাকলেও সবসময় জ¦ালানি সংকুলান দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর্থিক সংকট রয়েছে। আর বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে ভ্যাকসিন মান নিয়ন্ত্রণ করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা কলাবাসী’র সভাপতি সংগঠক নজরুল ইসলাম জানান, এই জনপদের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন করা প্রয়োজন। 


ঝালকাঠিতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বঞ্চিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝালকাঠি থেকে জানান, সদর হাসপাতালে সকালে এক প্রসূতি  রোগীর জরুরি  সেবা নিয়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ধারাখানা এলাকার রাসের হাওলাদারের স্ত্রী রিয়া মনি প্রসবজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শনিবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল  শেরে বাংলা  মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে  রেফার করেন। কিন্তু ফ্রি  সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহাদাত  হোসেন  রোগীকে নিয়ে  যেতে অস্বীকৃতি জানান, ফলে  রোগী ও স্বজনরা প্রায় এক ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, ‘আমরা বারবার  ফোন করলেও ড্রাইভার শাহাদাত  যেতে রাজি হননি, বরং তিনি দাবি করেন  যে তার একটি ‘ রোগী’ রয়েছে।

অবশেষে আমাদের কান্নাকাটি  দেখে স্থানীয় কয়েক শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে ড্রাইভার শাহাদাতকে চাপ দিলে তিনি এক ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন।’ এদিকে, সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে শাহাদাতের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বিরূপ আচরণ করেন। এমনকি তিনি তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং গাড়ির দরজায় লাথি  মেরে তা বন্ধ করে  দেন। এ ছাড়া শাহাদাতের বিরুদ্ধে এর আগে মাদক  সেবন ও ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ‘শাহাদাত আমাদের একজন আউটসোর্সিং ড্রাইভার, এবং ড্রাইভার সংকট থাকায় তাকে কাজে রাখা হয়েছে। তবে এই অনিয়মের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

×