প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত সুমন মিয়া।
১৬ বছর আগে বিয়ে করেন সুমন মিয়া ও লিজা আক্তার। ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে ২৪ মে বাবা হতে যাচ্ছিলেন সুমন। দেশ-বিদেশ ঘুরে নানা চিকিৎসকের পরামর্শও নেন। পরে ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে লিজা গর্ভধারণ করেন।
চিকিৎসক জানিয়েছেন টুইন বেবি হবে। গর্ভধারণের পর বাংলাদেশে এসে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অনাগত সন্তানের মুখ দেখার আগেই প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হলেন সুমন মিয়া।
নিহত সুমন মিয়া উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের ছেলে। তিনি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তিনি পোলট্রি ফিড, ও মাছের খামারের ব্যবসা করতেন। নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন।
বুধবার দুপুরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মামদেরকান্দী গ্রামে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া। একপর্যায়ে নিজেকে বাঁচাতে জমির আল ধরে দৌঁড়ে পালিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নেন তিনি। পরে বিকেল ৬টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় থানা-পুলিশের সদস্যরা রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে তাঁর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। নিহত সুমনের প্রথম নামাজে জানাজা রায়পুরা উপজেলার সেরাজনগর এমএ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা চরসুবুদ্দি ঈদগা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সকল পদের নির্বাচন স্থগিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুরায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের অঘোষিত দুটি প্যানেল তৈরি হয়েছে। একটি প্যানেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী লায়লা কানিজ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া। অন্য প্যানেল চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস কামাল ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেল। ওই প্যানেলগুলো যৌথভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা করে আসছিলেন। ফেরদৌস কামাল পাড়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, অন্যদিকে আবিদ হাসানের শ্বশুর বাড়ি পাড়াতলী এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী খবিরুল ইসলাম জানান, রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া ও অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল দুইজনই চরাঞ্চল পাড়াতলীতে সমর্থকদের নিয়ে জনসংযোগ করছিলেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী লায়লা কানিজের সঙ্গে যৌথভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন সুমন মিয়া ও তার সমর্থকরা। যাওয়ার পথে মামদেরকান্দী এলাকায় দুপুর দেড়টায় ২০/২৫টি মোটরসাইকেলে করে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেলের একদল কর্মী সুমনের দুইটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস পথরোধ করে ভাঙচুর শুরু করলে সুমনের বডিগার্ড লুৎফর লাইসেন্স করা শর্টগান বের করে ফাঁকা গুলি করেন।
এ সময় উৎ পেতে থাকা রুবেলের শত শত কর্মী-সমর্থক ঘটনাস্থলে এসে সুমনসহ তাঁর কর্মীদের মারধর করেন। উপর্যুপরি মারধরে গুরুতর আহত সুমন দৌঁড়ে পালিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নেন তিনি। বিকেল সোয়া ৬টার দিকে পুলিশ বাঁশগাড়ী ফাঁড়ি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সুমনকে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেআনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রায়পুরার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খান নুরউদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর জানান, হামলা হওয়ার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর সুমন মিয়াকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার মাথায়-নাকে-মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটুকু বলা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
নিহত সুমন মিয়ার বাবা চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন জানান, তাঁর ছেলে সুমনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর সুমনের মাসহ পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে প্রসবের অপেক্ষায় থাকা সুমনের স্ত্রী লিজাকে এখনও ঘটনা জানানো হয়নি। জানাজা-দাফন শেষে মামলা করার জন্য থানায় যাবেন তিনি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া নিহতের ঘটনায়এখনও পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা নেওয়া হবে। তাকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে সন্দেহজনকভাবে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এসআর