ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

শীতে সৈয়দপুর-ঢাকা বিমানের সিডিউল বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

শীতে সৈয়দপুর-ঢাকা বিমানের সিডিউল বিপর্যয়

উত্তরাঞ্চলজুড়ে ঠান্ডা জেঁকে বসতে শুরু করেছে

উত্তরাঞ্চলজুড়ে ঠান্ডা জেঁকে বসতে শুরু করেছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে শৈত্যপ্রবাহের কথা। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের জনপদ। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
দেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর সৈয়দপুরে সোমবার  সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গোটা জনপদ। সমতলের রাস্তায় যনবাহনে চলাচলে যেমন বিঘ্ন সৃষ্টি করে তেমনি আকাশ পথেও ছিল বিমানের সিডিউল বিপর্যয়। এ কারণে জেলার সৈয়দপুর-ঢাকা-সৈয়দপুর বিমানের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারেনি। ফলে চারটি ফ্লাইটের যাত্রীরা আটকা পড়েছে বিমানবন্দর লাউঞ্জে।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, সোমবার সৈয়দপুরে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গত দুদিন ধরে এ জনপদে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হালকা শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। ফলে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিমান চলাচলের জন্য দুই হাজার মিটার ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) প্রয়োজন হয়, সেখানে ৭০০ মিটার ভিজিবিলিটি রয়েছে। দুপুর ২টার পর আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পর বিমান চলাচল শুরু হয়। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটের সিডিউল বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, কোনো ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি। দুপুরের পর  ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। 
এ দিকে ঘন কুয়াশার দাপটে স্বাভাবিক জনজীবনসহ জবুথবু হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষেরা। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদী বেষ্টিত নীলফামারীসহ উত্তরজনপদের প্রকৃতি ঘন কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত। ভোরে সূর্যোদয় হলেও কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে নিখোঁজ ছিল সূর্যের আলোর ঝলকানি।
এ অবস্থায় ভোর থেকে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছোট-বড় যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে রেলপথেও গতি কমেছে ট্রেনের। কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার দাপটে সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষ ঠিকই দেখা গেছে। তবে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় পথঘাটে থাকা ছিন্নমূল অসহায় মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে। যদিও এই কুয়াশা ও উত্তুরি হিমেল হাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহের কথা মনে করিয়ে দেয়। শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এই জনপদের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। 
বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে।
এদিকে শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সের মানুষ বেশি। এদিকে শীতে অসুস্থ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়ে মেডিক্যাল টিমকে গুরুত্বসহ সেবা দিতে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। 
জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুল জানান, শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশু, নারী ও বয়স্কদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও মনিটরিং টিম রয়েছে।
অন্যদিকে কৃষিজমিতে কাজের জন্য কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। কৃষকরা বলেছেন, এমন ঘন কুয়াশা পড়লে কৃষিতে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বরাবরই শীতে বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে কোল্ড ইনজুরি ও পচনসহ মড়ক বেড়ে যায়। 
কুড়িগ্রামে নৌপথে ১ ঘণ্টার পথ লাগছে ৩ ঘণ্টা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, শীত ও ঘন কুয়াশায় দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা থেকে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়ছে ঘন কুয়াশা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এখানকার শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। এদিকে ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করে দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। 
গাইবান্ধায় কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সোমবার সকালে গাইবান্ধা ঘন কুয়াশা দেখা যায়। যানবাহনগুলোকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রির মতো সোমবার সূর্যের দেখা মেলেনি। মঙ্গলবারও ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা নাও মিলতে পারে।  হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার ছিন্নমূল, চরাঞ্চল ও নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। একজন পথচারী আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি  বলেন,  আজ সকালে খুব কুয়াশা পড়েছিল। কুয়াশার কারণে রাস্তায় দূর থেকে আসা যানবাহন দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ রকম ঘন কুয়াশা পড়তে থাকলে এ বছর শীতের তীব্রতা বেড়ে যাবে।
গরম কাপড়ের খোঁজে মানুষ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, যশোরে শীত জেঁকে বসছে বেশ। সকাল-সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া গায়ে লাগলে শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে পুরোপুরি। তাইতো যশোরবাসী শীতের প্রস্তুতি হিসেবে শুরু করেছে গরম বস্ত্র কেনাকাটার। ফুটপাত থেকে শুরু করে আধুনিক বিপণিবিতানগুলোয় শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। সেখান থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানুষ কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাকটি। সব মিলিয়ে শহরের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্রের কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে।
লেপ তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা থেকে জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  মাগুরায় লেপ তৈরি করতে ব্যস্ত  সময় পার করছে কারিগররা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। ক্রেতা বিক্রেতারা আসছেন দোকানগুলিতে। জানা গেছে, মাগুরায় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রথম থেকে শীতের তীব্র তা বেড়েছে। ফলে শীত নিবারণের জন্য লেপ তৈরি করতে ব্যস্ত কারিগররা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। মাগুরা শহরের কলেজ রোডের এজি একাডেমি স্কুলের মার্কেটের ছাদে কারিগররা লেপ তৈরি করছেন। সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলছে।

×