ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

শেরপুর জেলা

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে, বিএনপি আন্দোলনে

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে, বিএনপি আন্দোলনে

কৃষিখাদ্য সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত অঞ্চল শেরপুর

অনেক প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের পাদপীঠ এবং কৃষিখাদ্য সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত অঞ্চল শেরপুর। সীমান্তবর্তী এ জেলায় শীতের শুরুতে যেন কিছুটা উষ্ণতা ছড়াচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হাওয়া। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাঠে, ময়দানে নেই রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো। সংসদের বিরোধী দল জাপা শেরপুর সদরে সক্রিয় থাকলেও অন্য দুটি আসনে তাদের কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে যাতায়াত বাড়িয়ে লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায় সভা-সমাবেশ করে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠ দখলে রেখে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাজির হচ্ছেন নানা সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে। অন্যদিকে নির্বাচনের মাঠে নেই বিএনপি ও জামায়াত। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও তাদের রাজপথের অবস্থান দুর্বল। ফলে সাম্প্রতিক হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে মাঠে দেখা যাচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতকে। উল্টো মাঠ দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এমনই অবস্থায় নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততটাই আলোচনা বাড়ছে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং কোন দলের কে পাচ্ছেন মনোনয়ন সেটা নিয়ে।
জেলায় সংসদীয় আসন তিনটি। এর মধ্যে সদর উপজেলার একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে শেরপুর-১ আসন, নালিতাবাড়ীর একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন এবং নকলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে শেরপুর-২ আসন এবং শ্রীবরদীর একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং ঝিনাইগাতীর সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে শেরপুর-৩ আসন।
শেরপুর-১ ॥ আসনটিতে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। ১৯৯৬ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসনে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় দফায় নির্বাচিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ‘নিরহংকার’ আতিক সাধারণ জীবন যাপনের কারণে এবং এলাকায় সরকারের নজরকাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে তার একটি আলাদা ইমেজ রয়েছে।

পরিচিতি পেয়েছেন ‘মাটি ও মানুষের নেতা’ হিসেবে। সর্বোপরি পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভোটের দিক দিয়ে প্রায় সমান্তরাল অবস্থানে থাকলেও ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের আটটি ইউনিয়নই আওয়ামী লীগের বিশাল ভোটব্যাংক হিসেবে খ্যাত। আর পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী হওয়ার পাশাপাশি ওই বিশাল ভোটব্যাংকের নিয়ন্ত্রক আতিক নিজেই। যে কারণে তিনি ভোটের রাজনীতিতে হিরো হিসেবেই আলোচিত। আর এবারের সংসদের শেষ মেয়াদে সম্প্রতি তিনি নিজ আসনের নেতাকর্মীদের জাতীয় সংসদ ভবন দেখানোর ব্যবস্থা করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার প্রতি বেজায় খুশি। ফলে তাদের মাধ্যমে হুইপ আতিকের পক্ষে তৃণমূল এখন চাঙ্গা।

তাই আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন এবং বরাবরের মতো এবারও ক্রমবর্ধমান ভোটসংখ্যার ব্যবধানে জয়ী হবেন- এমনটাই প্রত্যাশা দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের। কিন্তু হুইপ আতিকের পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু। গতবারের মতোই তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। যে কারণে নিজের বলয় নিয়ে প্রায় ছয়মাস যাবত নির্বাচনের মাঠে তৎপর। সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী হরতাল ও অবরোধ প্রতিরোধে মাঠে বিচরণ করছেন। তবে তিনি পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসী এবং পশ্চিমাঞ্চলটি স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামীবিরোধী অঞ্চল বলেই বিবেচিত। তারপরও ওই বলয়ের কিছু নেতাকর্মীর ধারণা, দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো বিশেষ আশীর্বাদে দলীয় মনোনয়নও বাগিয়ে নিতে পারেন ছানুয়ার হোসেন ছানু।
তাদের দুজনের বাইরে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী বেশ আগে থেকেই দলীয় নানা কর্মসূচিসহ উৎসব-পার্বণে অংশ নিয়ে দান-অনুদান বিলিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় তার পরিচিতি ও অবস্থানও নেহায়েত হালকা নয়। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে কালেভদ্রে মিটিং-সমাবেশ করছেন। তার অনুসারীদের দাবি, আতিক ও ছানুর রশি টানাটানির সুযোগে তিনি মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন এবং প্রজন্ম ’৭১ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। 
অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তরুণ চিকিৎসক সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা এবং জেলা যুবদলের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনটি জোটের রাজনীতির স্বার্থে ১৯৯১-২০০৮ পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। তবে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো ‘ধানের শীষ’ প্রতীক পান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. হযরত আলী। কিন্তু ঋণখেলাপির কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বিকল্প হিসেবে প্রার্থী করা হয় তারই মেয়ে তরুণ চিকিৎসক সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাকে। এবারও হযরত আলীর ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্তি না পাওয়ায় ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাই প্রার্থী হচ্ছেন এমনটাই শোনা যাচ্ছে।

সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভিত ভাঙতে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে বিএনপি। তবে জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মাসুদও প্রার্থী হতে তৎপর রয়েছেন। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কামারুজ্জামানের পুত্র হাসান ইমাম ওয়াফির নাম শোনা গেলেও এখন শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলামের নাম।
মহাজোটের শরিক হলেও জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও জাসদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো সমন্বয় নেই। যে কারণে তারা নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগকে ছাড় দিতে নারাজ। এক্ষেত্রে জাপা থেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি মাহমুদুল হাসান মনি মাঠপর্যায়ে বেশ তৎপর। এলাকায় মিটিং-সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। চরাঞ্চলের সন্তান হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনায় উঠে এসেছেন। তবে জেলা জাপার সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ উদ্দিনও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এছাড়া মাঠে তৎপর না থাকলেও জাকের পার্টি থেকে দলের চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সাল এবং জাসদ থেকে জেলা জাসদের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন- এমন গুঞ্জন রয়েছে।
শেরপুর-২ ॥ ‘ভিআইপি আসন’ খ্যাত এ আসনে আওয়ামী লীগ অতীতের চেয়ে অনেক শক্ত অবস্থানে থাকলেও মাঠে নেই দ্বন্দ্বে জর্জরিত বিএনপি। ফলে নির্বাচনী তৎপরতা দূরে থাক, তাদের দলীয় কর্মকা-ও খুব একটা চোখে পড়ে না। তারপরও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর অন্যতম সদস্য, সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং বর্তমানে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।

১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ’৯৬ সালে কিছু সময় তিনি খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ একসঙ্গে তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মেয়াদে নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং বিপুল স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নসহ কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। সীমান্তের নাকুগাঁও স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরের পাশাপাশি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে নির্বাচনী এলাকাকেই করে তুলেছেন নজরকাড়া ও আলোকিত। এবারও তিনি দলের প্রধান সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে এ আসনের প্রভাবশালী দুই নেতার মৃত্যুর পর কিছুদিন আগে মতিয়া চৌধুরীর সমর্থকরা তাকে একক প্রার্থী ভেবে ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও এখন মাঠে তৎপর রয়েছেন আরও দুই সম্ভাব্য প্রার্থী।

তারা হচ্ছেন সাবেক সিনিয়র সচিব, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য নালিতাবাড়ীর সন্তান আবদুস সামাদ ফারুক এবং নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু। এছাড়া সদ্য অবসরে যাওয়া সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব, নকলার সন্তান নজরুল ইসলাম মাঠে না থাকলেও তার নামও আলোচনায় রয়েছে। 
এদিকে বিএনপির সাবেক হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর পুত্র প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে থেকে অংশ নিলেও এবার দীর্ঘদিন থেকেই এলাকায় নেই তার কোনো দলীয় তৎপরতা। ফলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী সংকটই বিরাজ করছে। ওই অবস্থায় সাম্প্রতিককালে তৎপরতা বেড়েছে প্রয়াত জাহেদ আলীর স্ত্রী নকলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন চৌধুরী ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র ভিপি আনোয়ার হোসেনের। সেইসঙ্গে নাম শোনা যাচ্ছে এক অতিথি নেতার। তিনি হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার অধিবাসী ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সদস্য ইলিয়াস খান।
এ আসনে জাপা ও জাসদ ছাড়া জামায়াত বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো তৎপরতা নেই। তবে অবস্থাভেদে জাপা থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুস সালামের পুত্র শওকত সাঈদ ও কেন্দ্রীয় নেত্রী রোজী সিদ্দিকী।
শেরপুর-৩ ॥ ‘লাকি আসন’ খ্যাত এই নির্বাচনী এলাকায় জেলার অন্য দুটি নির্বাচনী এলাকার চেয়ে উত্তাপ বেশি। সেই সঙ্গে এ আসনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বহুধা বিভক্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে রয়েছে সর্বাধিক ভিড়। অন্যদিকে অন্য দুটি আসনের চেয়ে এ আসনে গোছালো অবস্থায় রয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়েও নেই প্রতিযোগিতা। 
স্বাধীনতার পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ বারী বিজয়ী হলেও হেরে যান ২০০১ সালের নির্বাচনে। এরপর ২০০৮ থেকে টানা তিন দফায় সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক আমলা প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন। ফলে তার হাত ধরে সরকারের প্রায় ১৪ বছরে এলাকার উন্নয়ন নেহায়েত কম হয়নি। কিন্তু টানা তিন মেয়াদের পরও অভিযোগ রয়েছে, দল ও দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সমন্বয় নেই। যে কারণে দুটি উপজেলাতেই এমপি গ্রুপ ও এমপিবিরোধী গ্রুপের প্রকাশ্য অবস্থান রয়েছে। আর সেক্ষেত্রে এমপিবিরোধী গ্রুপের অবস্থানই মজবুত। এ আসন থেকে চাঁন ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত মাঠে তৎপর ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন দফায় নির্বাচিত সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম।

তিনি আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। এছাড়া শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম লিটনও নানাভাবে রয়েছেন তৎপর। তার অনুসারীদের দাবি, দুটি উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে তার এলাকাতেই রয়েছে ১১টি। তিনি প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গেই সমন্বয় রাখছেন। নারী প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত মাঠ বিচরণে থেকে আলোচনায় আছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসরিন বেগম ফাতেমা। তিনি দুটি উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকার জনগোষ্ঠীর পাশে থাকছেন নানা দুর্যোগে। বিলম্বে হলেও মাঠে নেমে আলোচনার ঝড় তুলেছেন শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম।

তার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ সাধারণ মানুষেরও দৃষ্টি কাড়ছে। তবে তার বাধা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া। একইভাবে হঠাৎ আলোচনায় এসেছেন লন্ডনপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি এইচএম ইকবাল হোসাইন। গণসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছেন, অকাতরে বিলাচ্ছেন সহায়তা। সম্প্রতি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে দুই উপজেলাজুড়ে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা করে তিনি এখন মানুষের মুখে মুখে। এছাড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক জিএম নুরুল ইসলাম হিরোর একলা চলা বিচরণের পাশাপাশি প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ বারীর পুত্র মোহসিনুল বারী রুমি রাজধানী ঢাকা থেকে কালেভদ্রে এলাকায় দেখা দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন।

নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আব্দুল হালিমের পুত্র বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজমুল মোবারক বিপ্লব। আর স্ত্রী ফারহানা প্র্রেমাকে নিয়ে শহর থেকে শুরু করে তৃণমূলের হাট-বাজারে গণসংযোগে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান রাজা। এছাড়া শ্রীবরদী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ আলী লাল, সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত খন্দকার খুররমের ভাই খন্দকার ফারুক আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফী জুবেরী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কৃষিবিদ ফররুখ আহমেদ ফারুক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য প্রকৌশলী মো. আল-আমিনও মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে মাঠে না থাকলেও যে নামটি বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে তিনি হচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের নায়ক খোরশেদ আলম কালা। পরিচিতি ও ক্লিন ইমেজের কারণে এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।
এদিকে এ আসন থেকে তিনবারের সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এরপরও তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকাটি গুছিয়ে রেখেছেন অতীতের চেয়েও বেশি। আর আগামী নির্বাচনে তিনি কেবল সম্ভাব্য প্রার্থী নন, বলা যায় একক প্রার্থী হিসেবেই এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে মাঠে তৎপর রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখেসহ নানা উৎসবপার্বণ আর দুর্যোগে এলাকায় নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন সব সময়ই। তবে শোনা যাচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা, শ্রীবরদীর সন্তান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট একেএম আমিনুল হক ওরফে আবুল খায়ের দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।
শ্রীবরদী উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুজ্জামান বাদল দলগত না হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। জাপা থেকে এ আসনে গত নির্বাচনের প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল আহসান ও কেন্দ্রীয় যুব সংহতি নেতা আবু নাসের বাদল প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হতে পারেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার।
তবে ভোটারদের প্রত্যাশা, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তথা মহাজোট ও জোটের প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াই হবে। তবে প্রার্থী নির্বাচনে ‘অঘটন’ না ঘটলে এবারও নানা সমীকরণে আওয়ামী লীগই এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

×